Wednesday, June 25, 2014

শবে বরাত সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

বর্তমানে শবে বরাত অর্থাৎ লাইলাতুন নিসফি মিনশাবান এর পক্ষে ও বিপক্ষে বিভিন্ন হাদীস পেশ করা হচ্ছে। এবং এটি নিয়ে তর্কও হচ্ছেবিশাল, তাই আমার এই আর্টিকেলটি লেখা হল।

১. সর্বপ্রথম লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান অর্থাৎ শবে বরাত এর ফজিলত আছে-কিনা তা নিয়ে আলোচনা করা যাক,

এই রাতের ফযিলতের পক্ষের হাদীসগুল নিম্নরুপঃ

১. আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন: এক রাতে আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খুঁজে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হলাম, আমি তাকে বাকী গোরস্তানেপেলাম।

তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন: ‘তুমি কি মনে কর,আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করবেন?’ আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণাকরেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোন স্ত্রীর নিকট চলে গিয়েছেন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বললেন: ‘মহান আল্লাহ তা’লা শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণহন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন।

হাদীসটিইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বর্ণনা করেন (৬/২৩৮), তিরমিযি তার সুনানে (২/১২১,১২২) বর্ণনাকরে বলেন, এ হাদীসটিকে ইমাম বুখারী দুর্বল বলতে শুনেছি। অনুরূপভাবে হাদীসটি ইমাম ইবনেমাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৯) বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদ দুর্বল বলে সমস্ত মুহাদ্দিসগণ একমত।


২. আবু মূসা আল আশ’আরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আল্লাহ তা‘আলা শাবানেরমধ্যরাত্রিতে আগমণ করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্তব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমাকরে দেন।

হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৫৫, হাদীস নং ১৩৯০),এবং তাবরানী তার মু’জামুল কাবীর (২০/১০৭,১০৮) গ্রন্থেবর্ণনা করেছেন।

আল্লামা বূছীরি বলেন: ইবনেমাজাহ বর্ণিত হাদীসটির সনদ দুর্বল। তাবরানী বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে আল্লামা হাইসামী(রাহমাতুল্লাহিআলাইহি) মাজমা‘ আয যাওয়ায়েদ (৮/৬৫) গ্রন্থে বলেনঃত্বাবরানী বর্ণিত হাদীসটির সনদের সমস্ত বর্ণনাকারী শক্তিশালী। হাদীসটি ইবনেহিব্বানও তার সহীহতে বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে দেখুন, মাওয়ারেদুজ জাম‘আন, হাদীস নং (১৯৮০), পৃঃ (৪৮৬)।


৩. আলী ইবনে আবী তালিব (রাদিয়াল্লাহুআনহু) থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেনঃরাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন শা‘বানের মধ্যরাত্রি আসবে তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম তথা রাতভর নামায পড়বে, আর সে দিনের রোযা রাখবে; কেননা সে দিন সুর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: ক্ষমাচাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি ক্ষমা করব। রিযিক চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি রিযিকদেব। সমস্যাগ্রস্ত কেউ কি আছে যে আমার কাছে পরিত্রাণ কামনা করবে আর আমি তাকেউদ্ধার করব। এমন এমন কেউ কি আছে? এমন এমন কেউ কিআছে?ফজর পর্যন্ত তিনি এভাবে বলতে থাকেন”।

হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮) বর্ণনা করেছেন। আল্লামা বূছীরি (রাহমাতুল্লাহিআলাইহি) তার যাওয়ায়েদেইবনে মাজাহ (২/১০) গ্রন্থে বলেন, হাদীসটির বর্ণনাকারীদের মধ্যে ইবনে আবিসুবরাহ রয়েছেন যিনি হাদীস বানাতেন। তাই হাদীসটি বানোয়াট।


৪.মুয়া'জ বিন জাবাল (রা)থেকে বর্ণিত :

তিনি বলেন, আল্লাহ ১৫ই শা'বানের রাতে তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতে রাহমাতের দৄষ্টি দান করেন। মুশরিক ও হিংসুক ব্যতিত সবাইকে মাফ করে দেন।

ইমামইবনে হাব্বান তার ছহিহ, ইমাম বায়হাক্বী তার শুয়াবুল ইমান, ইমামতাবরানী আল মু'জামুল কাবীর এবং আবু নায়ী'ম আল হুলয়ার মধ্যে এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাইসামী এই হাদিসটি বর্ণনা করারপর বলেন, এই হাদিসটির সকলবর্ণনাকারী বিশ্বস্ত এবং হাদিসটি ছহিহ।

এছাড়াইমাম মুনজারী আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব গ্রন্থে, ইমাম সুয়ুতী দুররুল মান্সুরে ও শেখ আলবানী তারসিল্সিলাতুছ ছাহীহাহও এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।

৫.আবি সা'লাবাহ (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,

যখন ১৫ই শা'বানের রাত আসে তখন, আল্লাহ তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতে রাহমাতের দৄষ্টি দান করেন। মুশরিক ও হিংসুক ব্যতিত সবাইকে মাফকরে দেন। এবং তিনি তাদেরকে তাদের শত্রুতার মধ্যে রেখে দেন।

ইমামবায়হাক্বী তার শুয়া'বুল ইমান, ইমাম সুয়ুতী দুররুল মান্সুরে ও শেখআলবানী তার সিল্সিলাতুছ ছাহীহাহ হাদিসটি বর্ননা করেছেন. হাফিজ বিন আ'ছিম কিতাবুস সুন্নাহতেও উল্লেখ করেছেন।

৬.অব্দুল্লাহ বিন আ'মর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আল্লাহ ১৫ই শা'বানের রাতে তাঁর সমস্তসৃষ্টিজগতে রাহমাতের দৄষ্টি দান করেন। দু'ব্যক্তি; খুনি ও হিংসুক ব্যতিত সবাইকে মাফ করেদেন।

এইহাদিসটি ইমাম আহমদ তার মুসনাদে ও ইমাম হাইসামী মাজমাউজ জাওয়াইদে, ইমাম মুনজারী আত- তারগীব ওয়াত-তারহীবগ্রন্থে ও শেখ আলবানী তার সিল্সিলাতুছ ছাহীহাহও বর্ননা করেছেন।


উপরক্ত ১ ও ৩ নং হাদীসটি একেবারেই দুর্বল।বাকীগুলো মুহাদ্দিসিনদের আলকে হাসান বা সহীহ বলে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে। উপরের ৬ টিহাদিসের মধ্যে ২টি দুর্বল বলে প্রামানিত কিন্তু বাকী ৪টি হাদীস সহীহ, কিন্তু বাকী৪টি হাদীস মুলত একটি হাদীস কিন্তু বর্ণনা সুত্র বিভিন্ন। উপরের ৪টি হাদীসে যেইশব্দগুল রয়েছে তা হলঃ
“আল্লাহ১৫ই শা'বানের রাতে তাঁরসমস্ত সৃষ্টিজগতে রাহমাতের দৄষ্টি দান করেন। মুশরিক ও হিংসুক ব্যতিত সবাইকে মাফ করে দেন।” এই শব্দতেই৪টি হাদীস বর্ণিত রয়েছে। সুতরাং প্রকৃত পক্ষেই ১৫ই শাবানের রাতে আল্লাহ পাক মুশরিক ও সুন্নত বিরোধীঅথবা বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যাক্তি ব্যাতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

এইরাতের ফযিলত স্বীকার করেছেনঃ

১. ইমামশাফেঈ (রাহমাতুল্লাহিআলাইহি)। [কিতাবুল উম্ম, ১মখণ্ড, পৃঃ ২৩১]
২. ইমাম আহমাদ (রাহমাতুল্লাহিআলাইহি)। [ইবনে তাইমিয়া তার ইকতিদায়ে ছিরাতেমুস্তাকীমে (২/৬২৬) তা উল্লেখ করেছেন]
৩. ইমাম আওযায়ী (রাহমাতুল্লাহিআলাইহি)। [ইমাম ইবনে রাজাব তার ‘লাতায়েফুল মা‘আরিফ’ গ্রন্থে (পৃঃ১৪৪) তার থেকে তা বর্ণনা করেছেন]
৪. শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহমাতুল্লাহিআলাইহি)। [ইকতিদায়ে ছিরাতেমুস্তাকীম ২/৬২৬,৬২৭, মাজমু‘ ফাতাওয়া ২৩/১২৩, ১৩১,১৩৩,১৩৪]।
৫. ইমাম ইবনে রাজাব আল হাম্বলী (রাহমাতুল্লাহিআলাইহি)। [তার লাতায়েফুল মা‘আরিফ পৃঃ১৪৪ দ্রষ্টব্য]।
৬. প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) [ছিলছিলাতুল আহাদীসআস্‌সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯]
৭. বাংলাদেশের প্রখ্যাতআলেম মুফতি কাজী ইবরাহিম


সুতরাংলাইলাতুন নিসফি মিন শাবান অথবা শবে বরাতের ফযিলত প্রমানিত।


২.এই রাতে ইবাদাত করা যাবে-কি-যাবে না সেই বিষয়ে আলোচনা করা হলঃ

লাইলাতুননিসফি মিন শাবান অর্থাৎ শবে বরাত এর রাতে ইবাদাত করার পক্ষে একটিও সহীহ হাদীস নেই।
যারাএই রাতে ইবাদাতের পক্ষে কথা বলেন তারা এই বলে যুক্তি দেন যে, ফযিলতপূর্ণ রাতকিঘুমিয়ে কাটিয়ে দিব? এটা তো ওযৌক্তিক। এছাড়া তাদের আর কোন দলীল ও যুক্তি নেই।

এইরাতে ব্যাক্তিগত ইবাদাত করার পক্ষে মত দিয়েছেনঃ
১. ইমাম আওযা‘য়ী
২. শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া
৩. আল্লামা ইবনে রজব

এইরাত উপলক্ষে যে কোন ইবাদাত করা কে বিদ’আত বলেছেনঃ
১.প্রখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ‘আতা ইবনে আবি রাবাহ
২. ইবনে আবি মুলাইকা
৩. মদীনার ফুকাহাগণ
৪. প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ীআব্দুর রাহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম
৫. ইমাম মালেকের ছাত্রগণ
৬.শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায

ইমামআহমাদ ইবন হাম্বল(রাহিমাহুল্লাহ) এই রাতকে কেন্দ্র করে কোন ইবাদাত এর পক্ষে বাবিপক্ষে মত দিয়েছেন বলে যানা যায় না।

কোন ইবাদাতের ক্ষেত্রে কোন আলেমের মন্তব্যদলীল নয়, বরং দলীল হল আল্লাহর কিতাব(কোরআন) ও রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বানী ও কাজ(সহীহ হাদীস), যদি এই দু’ইয়ের মধ্যে দলীল থাকে তাহলেই আমলঅথবা ইবাদাত করা যাবে আর না থাকলে করা যাবে না।

কোন দিন অথবা রাতের ফযিলত থাকলেই তাতে ইবাদাতকরা যাবে বা করতে হবে এরুপ কোন বিধান ইসলামে নেই। বরং সহীহ হাদীসে আমরা তারউল্টোটা দেখতে পাই, যেমনঃ

রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

“সুর্য যে দিনগুলোতে উদিত হয় তম্মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ট দিন, জুম‘আর দিন”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৪)


এ থেকে প্রমানিত হয় যে জুম’আর দিনের ফযিলতরয়েছে,

কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা জুম‘আর রাত্রিকে অন্যান্য রাত থেকে ক্বিয়াম/ নামাযের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিও না, আর জুম‘আর দিনকেও অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা করে রোযার জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিও না, তবে যদি কারো রোযার দিনে সে দিন ঘটনাচক্রে এসে যায় সেটা ভিন্ন কথা”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪৪, ১৪৮)


উপরের হাদীস থেকে প্রমানিতহয় যে জুম’আর দিন ও রাত উপলক্ষে কোন ইবাদাত করা যাবে না, কিন্তু জুম’আর দিনেরফযিলত তো রয়েছে, তার পরও জুম’আর দিন উপলক্ষে ইবাদাত করা যাবে না, এটিই প্রমান করেযে ফযিলত থাকলেই যে ইবাদাত করতে হবে এমন কোন কথা নেই।

এছাড়াও ফযিলতের সাথেইবাদাতের কোন সম্পর্ক নেই, এর আরেকটা উদাহরন হল লাইলাতুল ক্বাদর।
আমরা জানি যেরাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাইলাতুল ক্বাদর এর ফযিলত সম্পর্কেবর্ণনা করেছেন এবং ইবাদাত সম্পর্কেও বর্ণনা করেছেন, যদি এমনটি হত যে ফযিলত থাকলেইইবাদাত করতে হবে বা করা যাবে তাহলে রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাইলাতুলক্বাদর এর ইবাদাতের ব্যাপারে কিছু বলতেন না শুধু মাত্র ফযিলতের কথাই বলতেন, কেননাফযিলতের কথা বললে ইবাদাত এমনিতেই করবে, কিন্তু তিনি এমনটি করেননি বরং ফযিলতের সাথেসাথে ইবাদাতের কথাও বলেছেন, এটাই প্রমান করে যে ফযিলতের সাথে ইবাদাত সম্পৃক্ত নয়,কেননা যদি সম্পৃক্ত থাকতো তাহলে ইবাদাতের কথা আর বর্ণনা করার প্রয়োজন পড়তো না কারনফযিলতের বিষয় তো বর্ণনা করা হয়েছে। ফযিলত থাকলেই ইবাদাত থাকবে এমন কোন কথারাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময় ছিল না, এটাই তার প্রমান।
এই নীতি(ফযিলত থাকলেইবাদাত করা) আমরা বানিয়ে নিয়েছি, এছাড়াও আমরা জানি যে আযান ও ইকামাত এর মধ্যে দোয়ারদ হয় না, অর্থাৎ আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়টি ফযিলতপূর্ণ, তাই বলে কি এখনথেকে আযান ও ইকামাতের মধ্যেও একে কেন্দ্র করে সালাত আদায় করবো? ফজিলততো রয়েছে,ইবাদাত করতে দোষ কোথায়, তাই না!!!
জুম’আর দিনের তো ফযিলতরয়েছে তার পরও রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুম’আর দিন উপলক্ষে বাড়তিইবাদাত করতে নিষেধ করাতে এটাই প্রমান হয় যে ফযিলত থাকলেই ইবাদাত করা বৈধ হবে না,বরং ইবাদাত করার জন্য ইবাদাতের নির্দেশ থাকতে হবে।

সুতরাং ফযিলত থাকলেইইবাদাত করা যাবে না, বরং ইবাদাত করার জন্য কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে দলীল প্রয়োজন।

কেননারাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

“যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাবে যা এর মধ্যে নেই, তা তার উপর নিক্ষিপ্ত হবে”
[সহীহ বোখারী, হাদীস নং ২৬৯৭]


এবং,রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ

“যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করবে যার উপর আমাদের দ্বীনের মধ্যে কোন নির্দেশ নেই তা অগ্রহণযোগ্য”
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮]


যেহেতু লাইলাতুন নিসফি মিনশাবান অর্থাৎ শবে বরাতের রাতে কোন ইবাদাত করার পক্ষে কোন সহীহ হাদীস নেই, এটাইপ্রমান করে যে এই রাতে ইবাদাত করা যাবে না, যদি আসলেই এই রাত ইবাদাতের রাত হত তাহলেএর পক্ষে অবশ্যই সহীহ হাদীস থাকতো। কিন্তু কোন সহীহ হাদীস নেই এই রাতে ইবাদাত করারপক্ষে সুতরাং এই রাত উপলক্ষে ইবাদাত করা অগ্রহণযোগ্য ও বিদ’আত।

এখন কেউ বলতে পারেন যে,ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ(রাহিমাহুল্লাহ) এর মত এত বড় আলেম এই রাতে ইবাদাত করার পক্ষেমত দিয়েছেন আর আপনি তাকে বিদ’আত বলছেন?
তার উত্তরে আমি বলব যে,ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ(রাহিমাহুল্লাহ) অনেক বড় একজন আলেম ও মুজতাহিদ ছিলেন, কিন্তুতিনি মানুষ ছিলেন, তার ভুল হওয়া স্বাভাবিক এবং তিনি এখানে ভুল করেছেন। কোন আলেমের মতামত কখনই শরীয়তের দলীল হতে পারেনা।

এছাড়াও কিছু তাবেয়ী এইরাতে ইবাদাত করার পক্ষে মত দিয়েছেন, যে সমস্ত তাবেয়ীনগণ থেকে এ রাত উদযাপনের সংবাদ এসেছে তাদের সমসাময়িক প্রখ্যাত ফুকাহা ও মুহাদ্দিসীনগণ তাদের এ সব কর্মকান্ডের নিন্দা করেছেন। যারা তাদের নিন্দা করেছেন তাদের মধ্যে প্রখ্যাত হলেনঃ তাবেয়ী ইমাম আতা ইবনে আবি রাবাহ(রাহিমাহুল্লাহ) যিনি তার যুগের সর্বশ্রেষ্ট মুফতি ছিলেন, আর যার সম্পর্কে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছিলেনঃ তোমরা আমার কাছে প্রশ্নের জন্য একত্রিত হও, অথচ তোমাদের কাছে ইবনে আবি রাবাহ রয়েছে।

এছাড়াও এই রাত পালনেরপ্রতিবাদে মদীনার প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ী আব্দুর রাহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম বলেছেনঃ“আমাদের কোন উস্তাদ, আমাদের মদিনার কোনো ফকিহ, কোন আলেমকে দেখিনি যে, শাবান মাসেরমাঝের রাতের(শবে বরাতের) দিকে কোন রকম মনোযোগ দিয়েছেন বা ভ্রুক্ষেপ করেছেন। এবিষয়ে সিরিয়ার তাবেয়ী মুহাদ্দিস মাকহুল যে হাদীস বর্ণনা করেন সে হাদীস তাদের(মদীনারফুকাহা) কারো মুখে কখনো শুনিনি”
[ইবনু ওয়াদ্দাদ, আল-বিদাউ পৃঃ ৪৬]




সুতরাং কোন আলেমের কথার উপর ভিত্তি করে আমল/ইবাদাত করা যাবে না, বরং ইবাদাত করার জন্য কোরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল প্রয়োজন।

Sunday, June 22, 2014

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতিশ্রুত “গাযওয়াতুল হিন্দ” কি অতি নিকটে???

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

“গাযওয়াতুল হিন্দ” বলতে ইমাম মাহদি এবং ঈসা (আঃ) এর আগমনের কিছুকাল আগে অথবা সমসাময়িক সময়ে এই পাক-ভারত- বাংলাদেশে মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যকার সংগঠিত যুদ্ধকে বুঝায়।

“গাযওয়া” অর্থ যুদ্ধ, আর “হিন্দ” বলতে এই উপমহাদেশ তথা পাক-ভারত-বাংলাদ
েশসহ মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা,নেপাল,ভু টানকে বুঝায়। এবং বর্তমানে এই অঞ্চলের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আমাদেরকে সেই গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহু আ'লাম। একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত আর তা হলো রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর প্রতিটি কথা সত্য এবং গত ১৪০০ বছরের ইতিহাস সেই সাক্ষী বহন করে চলেছে। এবং ইন শা আল্লাহ্* কিয়ামত পর্যন্ত সত্য হয়ে যাবেই। এটাই একজন মুসলিমের ঈমানের অন্যতম ভিত্তি যে সে রাসুলুল্লাহ(সঃ) এর সব কথা, ভবিষ্যৎবাণীকে বিনা বাক্যে বিনা দ্বিধায় মেনে নিবে।

রাসুলুল্লাহ(সঃ)
এর কথা অনুযায়ী খোরাসান (বর্তমান আফগানিস্থান) থেকে কালিমাখচিত কালোপতাকাধারীদের উত্থান এবং তাদের কাশ্মীর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া, পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ভারতের কাশ্মীর সীমান্তে ৭ লক্ষ সেনা মোতায়েন, পাক-ভারত-বাংলাদেশের হকপন্থী ইসলামী দলগুলোর আলোচনায় উঠে আসা, পানি নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং মুসলিমদের নির্যাতন নিয়ে ভারতের ভেতরে মুসলিমদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ, সেভেন সিস্টারস তথা ভারতের ৭ টি অঙ্গরাজ্যের স্বাধীনতার দাবি নিঃসন্দেহে ভারত বিভক্তির ইঙ্গিত বহন করে।
সে সময় অবশ্যই পাক-ভারত-বাংলাদেশের মুসলিম নামধারী মুনাফিকরা আলাদা হয়ে যাবে। তারা হইতো কাফিরদের পক্ষে যোগ দিবে অথবা পালিয়ে বেড়াবে। এবং এই
ভয়ঙ্কর যুদ্ধে মুসলিমরা জয়ী হবে এবং তারা বায়তুল মুকাদ্দাস (বর্তমান ফিলিস্তিন) এ গিয়ে ঈসা (আঃ) এর সাথে মিলিত হবে এবং খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করবে।

হাদিস শরীফে বর্ণিত “গাজওয়াতুল হিন্দ” সম্পর্কে আসা ৫ টি হাদিসই বর্ণনা করছি।

(১) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর প্রথম হাদিস

আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
“আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের থেকে হিন্দুস্থানের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। কাজেই আমি যদি সেই যুদ্ধের নাগাল পেয়ে যাই, তাহলে আমি তাতে আমার জীবন ও সমস্ত সম্পদ ব্যয় করে ফেলব। যদি নিহত হই, তাহলে আমি শ্রেষ্ঠ শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হব। আর যদি ফিরে আসি, তাহলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরায়রা হয়ে যাব”।
(সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২)

(২) হযরত সা্ওবান (রাঃ) এর হাদিস
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আজাদকৃত গোলাম হযরত সা্ওবান (রাঃ) বর্ণনা করেন,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আমার উম্মতের দুটি দল এমন আছে, আল্লাহ যাদেরকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ করে দিয়েছেন। একটি হল তারা, যারা হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আরেক দল তারা যারা ঈসা ইবনে মারিয়ামের সঙ্গী হবে’।
(সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২)

(৩) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর দ্বিতীয়
হাদিস
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হিন্দুস্তানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন,
“অবশ্যই আমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন, আর তারা রাজাদের শিকল/ বেড়ি দিয়ে টেনে আনবে । এবং আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন (এই বরকতময় যুদ্ধের দরুন)। এবং সে মুসলিমেরা ফিরে আসবে তারা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ) কে শাম দেশে (বর্তমান
সিরিয়ায়) পাবে”।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
“আমি যদি সেই গাযওয়া পেতাম, তাহলে আমার সকল নতুন ও পুরাতন সামগ্রী বিক্রি করে দিতাম এবং এতে অংশগ্রহণ করতাম । যখন আল্লাহ্ আমাদের সফলতা দান করতেন এবং আমরা ফিরতাম, তখন আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম; যে কিনা সিরিয়ায় হযরত ঈসা (আঃ) কে পাবার গর্ব নিয়ে ফিরত । ও মুহাম্মাদ (সাঃ) ! সেটা আমার গভীর ইচ্ছা যে আমি ঈসা (আঃ) এর এত নিকটবর্তী হতে পারতাম, আমি তাকে বলতে পারতাম যে আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর একজন সাহাবী”।
বর্ণনাকারী বলেন যে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মুচকি হাসলেন এবং বললেনঃ ‘খুব কঠিন, খুব কঠিন’।
(আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০৯)

(৪) হযরত কা’ব (রাঃ) এর হাদিস
এটা হযরত কা’ব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেনঃ
“জেরুসালেমের (বাই’ত-উল-মুক্বাদ্দাস) [বর্তমান ফিলিস্তিন] একজন রাজা তার একটি সৈন্যদল হিন্দুস্তানের দিকে পাঠাবেন, যোদ্ধারা হিন্দের ভূমি ধ্বংস করে দিবে, এর
অর্থ-ভান্ডার ভোগদখল করবে, তারপর রাজা এসব ধনদৌলত দিয়ে জেরুসালেম সজ্জিত করবে, দলটি হিন্দের রাজাদের জেরুসালেমের রাজার দরবারে উপস্থিত করবে, তার সৈন্যসামন্ত তার নির্দেশে পূর্ব থেকে পাশ্চাত্য পর্যন্ত সকল এলাকা বিজয় করবে, এবং হিন্দুস্তানে ততক্ষণ অবস্থান করবে যতক্ষন না দাজ্জালের ঘটনাটি ঘটে”।

(ইমাম বুখারী (রঃ) এর উস্তায নাঈম বিন হাম্মাদ (রঃ) এই হাদিসটি বর্ণনা করেন তার ‘আল ফিতান’ গ্রন্থে । এতে, সেই উধৃতিকারীর নাম উল্লেখ নাই যে কা’ব (রাঃ) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছে)

(৫) হযরত সাফওয়ান বিন উমরু (রাঃ)
তিনি বলেন কিছু লোক তাকে বলেছেন যে রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
“আমার উম্মাহর একদল লোক হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ তাদের সফলতা দান করবেন, এমনকি তারা হিন্দুস্তানের রাজাদেরকে শিকলবদ্ধ অবস্থায় পাবে। আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন। যখন তারা সিরিয়া ফিরে যাবে, তখন তারা ঈসা ইবনে মারিয়ামকে (আঃ) এর সাক্ষাত লাভ করবে”।
(আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪১০)

এখানে রাসুল (সাঃ) এর বর্ণিত তৎকালীন হিন্দুস্তানের সীমারেখা বর্তমান ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।
বর্তমানে এই উপমহাদেশের মুর্তিপুজারী ভূখণ্ডের মুসলিম প্রধান ভূখণ্ডের উপর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের অব্যাহত প্রচেষ্টা দেখলে বুঝা যায় যে, এটি একদিন চূড়ান্ত সংঘাতময়রূপ ধারণ করবে এবং এখানকার দ্বীন ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যৎ বাণী মোতাবেক উম্মতের একটি দলকে এই দিকে অগ্রসর হতে হবে। এবং এটি ঘটবে সেই সমসাময়িক সময়ে যখন সমগ্র দুনিয়াতে ইসলামের ক্রান্তিলগ্নে ইসলামকে খিলাফতের আদলে সাজাতে আল্লাহ ইমাম মাহদিকে প্রেরণ করবেন আর যার খেলাফতের সপ্তম বছরে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে ঈসা (আঃ) এর আগমন ঘটবে।

"CIA terrified of Ghazwa e Hind"
শিরোনামে এই ভিডিওটি দেখলে
বুঝতে পারবেন তারা কতোটা সচেতন আর
আমরা কতোটা গাফেল হয়ে আছি।
http://www.youtube.com/watch?v=RqNbqfai9aE
প্রকৃত সময় এবং অবস্থা একমাত্র আল্লাহ্*
সুবহানু তায়ালাই জানেন। আমরা কেবলমাত্র
হাদিসের আলোকে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট
অনুযায়ী ঘটনা সম্পর্কে নিজেদেরকে সচেতন
এবং প্রস্তুত করতে পারি। মহান আল্লাহ্*
আমাদেরকে সহিহ বুঝ দান করুন,ক্ষমা করুন,
মুনাফিকি থেকে হিফাজত করুন এবং তার প্রিয়
বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।

জ্বিহাদে অংশগ্রহণের ৪৪টি উপায় - [ইমাম আনোয়ার আল- আওলাকি (রহঃ)]

জ্বিহাদে অংশগ্রহণের
৪৪টি উপায়
- ইমাম আনোয়ার আল-
আওলাকি (রহঃ)



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

০১. জিহাদের জন্য বিশুদ্ধ নিয়ত থাকা।
০২.শাহাদাত পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
০৩. নিজের মাল সম্পদ দারা জিহাদ করা।
০৪. মুজাহিদদের জন্য টাকা সংগ্রহ করা।
০৫. একজন মুজাহিদকে টাকা দিয়ে সাহায্য করা।
০৬. একজন মুজাহিদের পরিবারকে দেখাশোনা করা।
০৭. শহীদের পরিবারকে দেখাশোনা করা।
০৮. জেলে বন্দি ভাইদের পরিবারগুলোর দেখাশোনা করা।
০৯. মুজাহিদদের যাকাত প্রদান করা (জ্বিহাদের খরচ বাবদ)।
১০. মুজাহিদদের মনোবল বাড়ানো এবং তাদের উৎসাহ প্রদান করা।
১১. মুজাহিদদের চিকিৎসায় সাহায্য প্রদান করা।
১২. মুজাহিদদের সমর্থন করা এবং তাদের জন্য উঠে দাঁড়ানো।
১৩. পশ্চিমা মিডিয়ার মিথ্যাচারের মোকাবিলা করা।
১৪. মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন করা।
১৫. জিহাদের ব্যাপারে অন্যদের উৎসাহ প্রদান করা।
১৬. মুজাহিদদের নিরাপত্তা দেয়া এবং তাদের গোপোনীয়তা রক্ষা করা।
১৭. মুজাহিদদের জন্য দোয়া করা।
১৮. জিহাদের খবর জানা এবং তা প্রচার করা।
১৯. মুজাহিদ এবং তাদের আলেমদের লেখনী প্রচার করা।
২০. মুজাহিদদের পক্ষে ফতোয়া দেয়া।
২১. আলেম এবং ইমামদের মুজাহিদদের তথ্য এবং খবর পৌঁছে দেয়া।
২২. শারীরিক যোগ্যতা অর্জন করা।
২৩. অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেয়া।
২৪. প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ নেয়া।
২৫. জিহাদের ফিকহ্ ও মাসলা জানা।
২৬. মুজাহিদদের রক্ষা করা এবং তাদেরক সাহায্য করা।
২৭. “আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা” - এই আকিদার বিকাশ করা।
২৮. মুসলিম বন্দীদের প্রতি আমাদের দায়িত্য পালন করা।
২৯. জিহাদি ওয়েবসাইট তৈরী করা।
৩০. আমাদের সন্তানদের জিহাদ এবং মুজাহিদদের প্রতি ভালবাসা শেখানো। ফতোয়া দেয়া।
৩১. বিলাসী জীবনযাপন এড়িয়ে চলা।
৩২. মুজাহিদদের কাজে লাগে এমন যোগ্যতা অর্জন করা।
৩৩. যে সব দল জিহাদের জন্য কাজ করছে তাদের সাথে যোগ দেয়া।
৩৪. হক আলেমদের দিকে অন্যদের এগিয়ে আনা।
৩৫. হিজরতের জন্য প্রস্তুত থাকা।
৩৬. আত্মিক প্রশিক্ষণ নেয়া।
৩৭. মুজাহিদদের নসিহাহ্ দেয়া।
৩৮. ফিতনা বিসয়ের হাদিস পড়া।
৩৯. বর্তমান যুগের ফেরাঊন এবং তার জাদুকরদের মুখোশ উন্মোচন করা।
৪০. নাসেদ (জ্বিহাদী গজল) তৈরী করা।
৪১. শত্রুদের অর্থনীতি বর্জন করা।
৪২. আরবী শেখা।
৪৩. বিভিন্ন ভাষায় জিহাদি লেখনী অনুবাদ করা।
৪৪.“মুক্তি প্রাপ্ত দল” - এর বিশিষ্ট সম্পর্কে অন্যদের শিক্ষা দেয়া।

Thursday, June 12, 2014

*** বিয়ের অপর নাম প্রশান্তি, উচ্ছ্বাস আর দয়া *** (পর্ব - ০১)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম.

কিশোর বয়স থেকে বিয়ের ব্যাপারে আমার একটা প্রশ্ন ছিলো মনে, সেই প্রশ্নটা যাদের করেছিলাম, তাদের উত্তর কিছু খুবই নিম্নমানের। তাই আদতে আমার কৌতুহল নিবৃত্ত হয়নি। প্রশ্নটি ছিলো, দু’জন মোটামুটি অপরিচিত মানুষ কীভাবে সারাটা জীবন একসাথে কাটিয়ে দিতে পারে? মোটামুটি অপরিচিত বললাম এই কারণে যে, বিয়ের আগে থেকে আসলে তেমন একটা জানাজানি একদমই সম্ভব না। একসাথে থাকতে গেলে তখন টের পাওয়া যায় যে অনেকে অনেক ছোট-ছোট বিষয়েই বিরক্ত হয়। আর তার উপরে যখন একটা বয়স পরে অনেকের শরীরে রোগবালাই ভর করে, তখন তো অপরজন অপার ভালোবাসায় আর যত্নে তার দেখাশোনা করেন — এমনটাই বা কী করে সম্ভব ?

অবশেষে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম। তাও পেয়েছি পবিত্র কুরআনুল কারীমের আয়াত থেকে। নুমান আলী খানের আলোচনা থেকে শেখা সেই আয়াতটির ব্যাখ্যা এখানে উল্লেখ করছি –

আল্লাহ বলছেনঃ

“আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে”। [সূরা আর-রুমঃ ২১]

এই আয়াতটিতে আল্লাহ্‌ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অতুলনীয়, সংক্ষিপ্ত এবং সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়ে এই সম্পর্ককে তাঁর (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) একটি নিদর্শন (আয়াত) বলে উল্লেখ করেছেন। আসুন এই পবিত্র সম্পর্ক সম্বন্ধে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কি বলেছেন সেটা জানি। সম্পর্কটির বিভিন্ন পর্যায় তিনি তিনটি শব্দের দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন।

“..যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে (আরবি শব্দটি হচ্ছে – তাসকুনু) থাক…”

১) এই ‘তাসকুনু’ শব্দটির মূল হচ্ছে সুকুন । সুকুন = প্রশান্তি।

যে কেউ ই তার ভালবাসার ব্যক্তির সাথে থাকার সময় প্রশান্তির এই অনুভূতি তীব্রভাবে অনুভব করে । আনন্দ, সন্তুষ্টি আর প্রশান্তির এই অনুভূতি স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি ভালবাসাকে আরো তীব্র ও গাঢ় করে তোলে। আর এই সুকুন এগিয়ে নিয়ে যায় সম্পর্কের দ্বিতীয় ধাপের দিকে।

সম্পর্কের প্রথম পর্যায়টি সুকুনের মাধ্যমে তুলে ধরার পর দ্বিতীয় পর্যায়টি বর্ণনা করেন এইভাবে:

“… তিনি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন পারস্পরিক সম্প্রীতি (মাওয়াদ্দাহ)…”



২) মাওয়াদ্দাহ= গভীর আবেগের উচ্ছ্বাস মিশ্রিত ভালবাসা / কারো জন্য বা কোন কিছুর প্রতি তীব্র আকর্ষণ

অর্থাৎ, স্বামী বা স্ত্রী –

অপরজনের সাথে থাকার সময় প্রশান্তি অনুভব করে

তার প্রতি আবেগের উচ্ছ্বাস অনুভব করে

এভাবে স্বামী স্ত্রীর এই যাত্রা যতই এগিয়ে যেতে থাকে আবেগের উচ্ছ্বাস ক্রমশ কমতে থাকে। দুজনেই আরো পরিণত হয় এবং তাদের কল্পনার স্বপ্নগুলো ফিকে হতে শুরু করে। এই পথচলায় অনিবার্যভাবেই কিছু বাধা-বিপত্তি আসে। প্রথম দিকে উভয়েই আবেগে অন্ধ থাকলে ও ধীরে ধীরে একে অপরের দোষ-ত্রুটিগুলো খুঁজে পেতে শুরু করে।

আল্লাহ্‌ আয়াতটিতে এরপরে বলেছেনঃ

“… এবং তিনি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন দয়া (রাহমা)…”


৩) রাহমা = দয়া/ মমতা/ কোমল স্নেহময় ভালবাসা।

এখন সময়ের সাথে সাথে আবেগের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়তে শুরু করেছে এটা-সেটা নিয়ে খুনসুটি আর ঝগড়ার কারণে আগের সেই অখন্ড প্রশান্তি ও হয়ত সবসময় থাকেনা তাই আল্লাহ্‌ বললেন যে তিনি উভয়ের হৃদয়ে দিয়েছেন একে অপরের জন্য ‘রাহমা’ । -যাতে করে মান-অভিমানে জড়িয়ে পড়লেও তারা যেন একে অপরকে গভীর মমতায় ক্ষমা করে দিতে পারে। এই ‘রাহমা’ ই সম্পর্কে এগিয়ে নিয়ে যায় কারণ যত কিছুই হোক না কেন বুকের গভীরে আমরা কখনোই চাইনা আমাদের ভালবাসার মানুষটা কষ্ট পাক।

আয়াতটির শেষে আল্লাহ বলেছেনঃ

“… নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে”


সুবহানাল্লাহ !!

সুন্দর এই নিদর্শন নিয়ে আপনি চিন্তা করেছেন কি? এই অসাধারণ বাণী জানার পরে কোন মুসলিম-মুসলিমাহর উচিত নয় ‘কেয়ারিং আর শেয়ারিং’ এর নামে হারাম সম্পর্ক করতে যাওয়া বরং আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল করে বিয়েটা করেই ফেলা।


বিয়ে করার ব্যাপারে সবকিছুই প্রতিকূল খুঁজে পাচ্ছেন? এখন উপায়?


আল্লাহর নির্দেশ মানার নিয়াত করে হাত দু’খানি তুলে দুআ করে সাহায্য চাইতে পারেন। কোন কঠিন কিছুকে সহজ করে দেয়ার মালিক আল্লাহ। কিন্তু নিয়াত করার এবং দুআ করার কাজটা আমাদেরকেই করতে হবে।

কোন হারাম সম্পর্ক নয়, কোন হারাম দৃষ্টি নয়, হারাম কোন যোগাযোগ নয় ইনশাআল্লাহ। বরং চলমান সমাজের এইসব কলুষতাকে এড়িয়ে পবিত্র সম্পর্কটিতে দু’জনার সম্পর্কের প্রতিটি মূহুর্ত যেন ইবাদাত হয় সেই ইচ্ছা পোষণ করে দুআ করা দরকার। আল্লাহর দেওয়া সুকুন, মাওয়াদ্দাহ আর রাহমাহ অর্জনের অভিপ্রায় বুকে নিয়ে ক্রমাগত চাইতে থাকা উচিত। চাওয়ার আবেগ আর তীব্রতা বেশি থাকলে কেঁদে কেঁদে জায়নামাজ ভিজিয়ে ফেলে চাইতে হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত দু’আ শুনেন। আল্লাহ অবশ্যই সবকিছু সুন্দর, শান্তিময় আর সহজ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ, যদি তাঁর কাছে আমাদের চাওয়া হয় সুন্দর।

নিশ্চয়ই আল্লাহ এই বিশ্বজগতের প্রতিপালক, যিনি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী, যিনি হও বললেই হয়ে যায়, যিনি অসীম করুণাময়, পরম দয়ালু, যিনি আমাদের সমস্ত দুআ শোনেন। আমাদের রব আল্লাহর কাছে ছাড়া আমরা আর কার আছে যাবো? দু’হাত রিক্ত-শূণ্য আমরা চেয়ে চেয়েই একদিন সম্পদে পূর্ণ হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেনঃ

“…যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে… ” [সূরা বাকারাহ : ১৮৬] (পর্ব - ০১)

টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়ার ভয়াবহতা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

আবু যর রা. বলেন, রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির সাথে কথা তো বলবেনই না বরং তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। এমনকি তিনি তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না বরং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারা কারা? তবে এরা তো ধ্বংশ, তাদের বাঁচার কোন রাস্তা নাই। রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম- এ কথা তিনবার বলেছেন। তারা হলঃ


১) যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরে।

২) যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে ব্যাবসার পণ্য বিক্রি করে। 

৩) যে ব্যক্তি কারো উপকার করে আবার খোটা দেয়।

 (মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইব্‌ন মাজাহ্‌)।


আবু হুরায়রা নবী -সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম- থেকে বর্ণনা করে বলেন, “লুঙ্গির যে অংশ টাখনুর নিচে থাকবে তা আগুনে প্রজ্জলিত হবে।”

 (বুখারী)

জাবের ইব্‌ন সুলাইম রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, “টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পড়ার ব্যাপারে সাবধান হও। কারণ, তা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ অহংকার করাকে পছন্দ করেন না।” 

(আবু দাঊদ। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)।


ইব্‌ন বায এবং ইব্‌ন উছাইমীন (রাহ.) এর ফাতওয়া

ইব্‌ন বায (রাহ.) বলেন, “যে কোন অবস্থায় টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়াকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অহংকারের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। কারণ, তিনি বলেন, “টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়া থেকে সাবধান! কারণ তা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত।” এখানে তিনি বিশেষ কোন অবস্থাকে বাদ দেন নি। সুতরাং যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরবে সে এ শাস্তির আওতায় চলে আসবে। চাই তা পায়জামা হোক বা লুঙ্গি, কুর্তা বা অন্য কোন পোশাক। কোন পোশাকের ক্ষেত্রেই টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পড়ার সুযোগ নেই।”

মুহাম্মাদ ইব্‌ন সালেহ আল উছাইমীন (রাহ.) বলেন, “অহংকার বশতঃ যে ব্যক্তি লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পড়বে তার শাস্তি হল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার সাথে কথা তো বলবেনই না বরং তার দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। এমনকি তিনি তাকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না বরং তার জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি আর যদি অহংকার বশতঃ ঝুলিয়ে পরে তাবে তার শাস্তি হল, সে যতটুকু কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরেছিল ততটুকু আগুনে প্রজ্জলিত হবে।


(তথ্যসূত্রঃ ফাতওয়া আল বালাদুল হারাম, ১৫৪৭, ১৫৪৯, ১৫৫০ নং পৃষ্ঠা)


Sunday, June 1, 2014

your kind consideretion (brothers and sisters)

হালালকে হারাম মনে করা অথবা হারাম জিনসকে হালাল মনে করা কুফুরি কাজ এবং এর দ্বারা আললাহর প্রতি মিথ্যারোপ করা হয়। আল্লাহ কঠোরভাবে কুরানে নিষেধ করেছেন তোমরা জিহবা দিয়ে (মনগড়া ফতোয়াবাজি করে) বলোনা এইটা হালাল এইটা হারাম। এর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ, এমনকি এর দ্বারা কেউ দ্বীন থেকে খারেজ হয়ে কাফের হয়ে যেতে পারে
(নাউযুবিল্লাহ)।
কিছুদিন আগে ভার্সিটির ছেলে মেয়েদের নিয়ে পোস্ট দিলে একজন দাবী করেছেন, আমি নাকি ভার্সিটির ছেলে-মেয়েদের প্রতি জেলাস! তাদেরকে দেখতে পারিনা এইজন্য তাদের সমালোচনা করি। কি হাস্যকর কথা, কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ে এমন ভালো ছেলে মেয়ে থাকতে পারে আবার অনেক বেদ্বীন ছেলে মেয়েও থাকতে পারে, এখানে জেলাসীর কি থাকতে পারে? এইভাবে সমালোচনা করা বা মানুষকে খারাপ বিষয় থেকে সতর্ক করতে গেলে আপনারা যদি বলেন আমরা জেলাস তাহলেতো অর্ধেক দাওয়াতের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ দাওয়াতের অর্ধেক হচ্ছে খারাপ কাজ থেকে মানুষকে সতর্ক বা নিষেধ করা, আর বাকি অর্ধেক হচ্ছে ভালো কাজের ব্যপারে মানুষকে দাওয়াত দেওয়া।

যাইহোক, কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের মাঝে খুব কমন কিছু কাজ যা তাদের দ্বীনের ব্যপারে উদাসীনতা ও অনীহার বহির্প্রকাশঃ
১. দ্বীন শিক্ষা না করা, কুরান ও সুন্নাহ স্টাডি না করা। না তাদের বাবা-মা, না তাদের সমাজ, শিক্ষক তাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেয়। শুধুমাত্র ছোটবেলায় ২-৪টা সুরা মুখস্থ করার মাঝেই ইসলাম শিক্ষা সীমাবদ্ধ।
২. বেশিরভাগ হচ্ছে বেনামাযী, নামাযের ধার ধারেনা। নামায না পড়লে ঈমান থাকেনা, এইটা ঠিকমতো জানেনা বা জানলেও কোন পড়োয়া করেনা।
৩. বেশিরভাগ ছেলেই মেয়েদের অনুকরণ করে দাড়ি রাখেনা। অনেকে দাড়ি রাখে, পোশাক-আশাক ও চাল-চলনে কাফের-মুশরেক ব্যভিচারী নায়কদের অনুকরণ করে, রাসুল সাঃ কে অনুসরন করেনা।
৪. বেনামাযী ছেলেদের কথা নাহয় বাদ, অনেক নামাযী ছেলেও টাখনুর নিচে প্যানট পড়ে। অথচ একজন মানুষ জাহান্নামী হওয়ার জন্য এই একটা কবীরা গুনাহই যথেযষ্ঠ (নাউযুবিল্লাহ)!
৫. বেশিরভাগ মেয়েই হিজাব পর্দা করেনা, অর্ধ নগ্ন ড্রেস আপ করে বা এমন, পোশাক পড়েও উলংগ। আর অনেকে হিজাব করে মনগড়া হিজাব, যা আসলে শরয়ী হিজাবের শর্ত পূরণ করেনা।
৬. ছেলে মেয়েরা ফ্রী মিক্সিং, বন্ধুত্ব, প্রেম ভালোবাসাকে স্বাভাবিক কালচার হিসেবে নিয়েছে অথচ এটা বড় একটা মুনকার যা গোটা সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যে যত বেশি অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায় লিপ্ত হচ্ছে সে তত বেশি স্মার্ট, ছেলে মেয়েরা জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে ক্রেডিট হিসেবে নিচ্ছে।
৭. কাফের মুশরেকদের ষড়্যন্ত্রে দ্বীনকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন শিরকী-কুফুরী ও হারাম শিক্ষা করছে।
৮. নামাযের সময় না দিয়ে সেই সময়ে ক্লাস দিয়ে, রমযানে পরীক্ষা দিয়ে আর অন্য সময় ছটি দিয়ে, এইভাবে বিভিন্নভাবে দ্বীনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
৯. অনেক প্রতিষ্ঠানে নারীদেরকে হিজাদ পর্দা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, যারা করতে চায় তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ কাফের-বেদ্বীন মেয়েরা অর্ধনগ্ন হয়ে আসছে, জিনা ব্যভিচারে লিপ্ত কর্তৃপক্ষ জানা সত্ত্বেও কোন উদ্যোগ নেয়না।
১০. গান বাজনা, টিভিতে নাটক সিনেমা খেলা দেখা, গল্পের বই এইগুলো থেকে বেচে আছে এমন ছেলে মেয়ের সং্খ্যা আসলে খুবই কম। এইসবগুলোর মাঝে আছে অশ্লীলতা, যিনা ব্যভিচারের দিকে দাওয়াত ও শিক্ষা দেওয়া, শিরক ও কুফর, মুর্তি পূজা। আশ্চর্যজনকভাবে মুসলিম দাবোদার নারী ও পুরুষেরা এইগুলোকে হালাল এর মতো করে নিয়েছে, কোন পরোয়া নেই। অনেক পথভ্র্ষ্ট লোকেরা শিল্প-সাহিত্য নাম দিয়ে এইগুলোর পক্ষে তর্ক করে।
১১. বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুযষ্ঠান ও দিবস উদযাপন নামে হাতে কলমে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে খারাপ কাজের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
১২. ছাত্র রাজনীতি নাম দিয়ে সন্ত্রাস্যি, খুনি, চাদাবাজ, ধর্ষক গ্রে তোলা হচ্ছে।
হে মুসলিম ভাই ও বোনেরা সতর্ক হন! শয়তানের ধোকায় পড়বেন না, কাফেরদের ষড়্যন্ত্রে পড়ে ঈমানকে সামান্য দুনিয়ার কারণে বিক্রি করে দেবেন না।

#দুনিয়া_মুমিনদের_জন্য_কারাগার_কাফেরদের_জন্য_জান্নাত

Saturday, May 31, 2014

ত্বাওয়াগীত তথা ত্বাগূত হলো, আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে যার ইবাদত করা হয় (১)

ত্বাওয়াগীত তথা ত্বাগূত হলো, আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে যার ইবাদত করা হয় (১ম পর্ব)। শাইখ আব্দুল মুনয়িম মুছত্বফা হালীমাহ

বিসমিল্লাহির  রাহমানির রাহীম ।

ত্বাগূত–যাদেরকে বর্তমানে আল্লাহর পরিবর্তে ইবাদত করা হচ্ছে,তাদের পরিচয় লাভ করা শ্রেয় হবে- যেন আমরা তাদের পরিহার করতে পারি এবং এদের উপর শারীয়াতের ওয়াজিব বিধান প্রয়োগ করতে পারি। আমরা সর্ব প্রথম ত্বাগূতদের মূল ও প্রধান নেতা দ্বারা আলোচনা শুরু করছি।



  • ১ – اَلشَّيْطَانُ – শয়তানঃ


সে হলো অভিশপ্ত। যে নিজের উপর প্রতিজ্ঞা করেছিল- বান্দাদেরকে আল্লাহর তায়ালার ইবাদত হতে দূরে রেখে অন্যের ইবাদতের দিকে আকৃষ্ট করবে।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ ﴿١٦﴾ ثُمَّ لآتِيَنَّهُم مِّن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ وَلاَ تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ ﴿١٧
(ইবলীস) বলল- আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন এ কারণে আমিও শপথ করে বলছি- আমি তাদের জন্যে সরল পথে অবশ্যই ওঁৎ পেতে বসে থাকব।  * অতঃপর আমি (পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে) তাদের সম্মুখ দিয়ে, পিছন দিয়ে, ডান দিক দিয়ে এবং বাম দিক দিয়ে তাদের কাছে আসব, আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞরূপে পাবেন না।
(সূরা আ’রাফ, ১৬-১৭ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
رَبِّ بِمَآ أَغْوَيْتَنِي لأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الأَرْضِ وَلأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ﴿٣٩﴾ إِلاَّ عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ﴿٤٠
সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে দেব। আপনার মনোনীত বান্দাদের ব্যতীত।      (সূরা হিজর, ৩৯-৪০ নং আয়াত)
অতএব, ঐ লোকদের উপর তার কোন ক্ষমতা নেই।
আর উক্ত গুণ দ্বারা অনেক মানব শয়তান গুণান্বিত হয়েছে, যারা নিজেদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছে এবং শিরক, কুফরও বিভ্রান্তিকে সাহায্য করার দায়ভার বহন করার জন্য সুদৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে গেছে।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
وَلاَ يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّىَ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُواْ
বস্ততঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যতক্ষর্ণ পর্যন্ত তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন হতে ফিরাতে না পারে যদি তা সম্ভব হয়।
(সূরা বাকারহ, ২১৭ নং আয়াত)

যদি প্রশ্ন করা হয়,  নিশ্চয় ত্বাগূত হলো আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করা হয়; অতএব, শয়তানের  উদ্দেশ্যে মানুষের ইবাদত কিরূপে হতে পারে?
এর উত্তরে আমরা বলবঃ কুফরী ও শিরক করার ক্ষেত্রে তার আনুগত্য ও অনুসরণ করার দিক দিয়ে ইবাদত বা দাসত্ব করা হয়।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آدَمَ أَن لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
হে বানী আদম, আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়নি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।    
(সূরা ইয়াসীন, ৬০ নং আয়াত)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
إِن يَدْعُونَ مِن دُونِهِ إِلاَّ إِنَاثًا وَإِن يَدْعُونَ إِلاَّ شَيْطَانًا مَّرِيدًا
তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শুধু নারীর আরাধনা করে এবং শুধু অবাধ্য শয়তানের পূজা করে। (সূরা নিসা, ১১৭ নং আয়াত)
এবং ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলঃ  يَا أَبَتِ لَا تَعْبُدِ الشَّيْطَانَ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمَنِ عَصِيًّا
হে আমার পিতা, শয়তানের ইবাদত করো না। নিশ্চয় শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য।
(সূরা মারইয়াম, ৪৪ নং আয়াত)


  • ২ – أَلْهَوٰى – প্রবৃত্তিঃ


أَلْهَوٰى– ‘প্রবৃত্তি’ কখনো اَلْمَيْلُ ‘ঝোঁক’ اَلْحُبَّ ‘ভালবাসা’ اَلْعِشْقُ ‘অনুরাগ’ বা ‘প্রেম’ -এর অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং ‘কল্যাণ ও অকল্যাণ’ -এর প্রবেশদ্বারেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং কোন জিনিসের ইচ্ছা করা ও কামনা করার অর্থে ব্যবহৃত হয়। এবং هَوَى النَّفْسِ অর্থাৎ اِرَادَتُهَا এর ‘ইচ্ছা করা’।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ       وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى
এবং যে ব্যক্তি খেয়াল-খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে।
(সূরা নাযিআত, ৪০ নং আয়াত)

এর অর্থ হলোঃ সে নিজেকে স্বীয় প্রবৃত্তি থেকে বিরত রেখেছে এবং এটা আল্লাহর অবাধ্যতায় যে সকল কাজের দিকে তাকে তা হতে নিবৃত্ত রেখেছে।
আর যখন সাধারণভাবে أَلْهَوٰى ‘প্রবৃত্তি’ শব্দ উচ্চারণ করা হবে, তখন গুণবাচক কোন শব্দ উল্লেখ না করা পর্যন্ত -এর দ্বারা নিন্দনীয় বিষয়ই উদ্দেশ্য হবে। যেমন তাদের কথাঃ هَوَى حَسَنٌ – ‘উত্তম প্রবৃত্তি; এবং هَوىً مُوَافِقٌ للِّصَّوَابِ (উক্ত) প্রবৃত্তি সত্যের অনুকুলে। (লিসানুল আরব। আমি (লেখক) বলছি কুরআনে কারীমে নিন্দনীয় শব্দের দ্বারাই শুধুমাত্র أَلْهَوٰى ‘হাওয়া’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে)
‘প্রবৃত্তি’ কোন কোন অবস্থায় ‘ত্বাগূত’ ও ‘মা‘বূদে’ পরিণত হয়ে যায়। তা হলো যদি আল্লাহর অবাধ্যতায় এর অনুসরণ ও আনুগত্য করা হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে এটাকে বিধান দানের মূল নির্ধারণ করা হয়Ñ এ ভাবে যে তার প্রবৃত্তি যে টাকে সত্য বলে মনে করবে প্রকৃত পক্ষে ওটাই সত্য। আর প্রবৃত্তি যেটাকে বাতিল বা মিথ্যা মনে করবে তবে ওটা বাতিল বা মিথ্যা, যদিও ওটা আল্লাহ তায়ালার শারীয়াতের পরিপন্থী হয়।
তদ্রুপভাবে ‘প্রবৃত্তি’ কে কেন্দ্র করেই বন্ধুত্ব স্থাপন করা এবং শত্রুতা করা। এভাবে যে স্বীয় প্রবৃত্তি যেটা কামনা করে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে যেটাকে কেন্দ্র করে বন্ধুত্ব স্থাপন করা ওয়াজিব তার ভিত্তিতে নয়। স্বীয় প্রবৃত্তি যার সঙ্গে দুশমনী রাখে তার সাথে শত্রুতা করে; যদিও তার সাথে শরীয়াতের দিক দিয়ে বন্ধুত্ব স্থাপন করা ওয়াজিব।
সুতরাং এমতাবস্থায় ‘প্রবৃত্তি’ আল্লাহর পরিবর্তে ভিন্ন মা’বূদ। সে প্রকৃত পক্ষে স্বীয় খেয়াল-খুশীকে প্রভু হিসাবে গ্রহণ করল এবং এটাকে আল্লাহ তায়ালার সমকক্ষ নির্ধারণ করে নিল।

যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا
যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।
(সূরা কাহ্ফ, ২৮ নং আয়াত)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ    أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا
আপনি তাকে কি দেখেন না, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন?
(সূরা ফুরকান, ৪৩ নং আয়াত)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ    أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ
আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন।
(সূরা জাসিয়া, ২৩ নং আয়াত)

ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার প্রবৃত্তির পূজা করে, তবে সে তো খেয়াল-খুশীকে ইলাহ (উপাস্য) হিসাবে গ্রহণ করল। তার প্রবৃত্তিই তার ইলাহ। যিনি ইলাহ হওয়ার উপযুক্ত তাকে ইলাহরূপে গ্রহণ করে না; বরং স্বীয় প্রবৃত্তিকে উপাস্য হিসাবে গ্রহণ করে। আর উক্ত প্রবৃত্তিকে উলাহরূপে গ্রহণকারী ব্যক্তির-এর প্রতি মুহাব্বাত রয়েছে; যেমন মুশরিকদের স্বীয় উপাস্যদের প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে এবং গোবৎস পূজারীদের গোবৎসের প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। আর এটা আল্লাহর সঙ্গে ভালবাসা এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে মুহাব্বাত করা নয়। এটা মুশরিকদের অনুরূপ ভালবাসা।
আর অন্তর কখনো কখনো আল্লাহকে ভালবাসার দাবী করে। অথচ প্রকৃতপক্ষে এটা শিরকী মুহাব্বাত হয়ে থাকে। তার প্রবৃত্তি যা কামনা করে সে তাকে ভালবাসে এবং কখনো কখনো অন্তর আল্লাহর ভালবাসার সঙ্গে প্রবৃত্তিকে শরীক করে থাকে।
(আল-ফাতাওয়া, ৮/৩৫৯)


  • ৩ – اَلسَّاحِرُ যাদুগরঃ


সে হচ্ছে ত্বাগূত। কেননা সে বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা আছে বলে দাবী করে। অতএব, সে যার প্রতি ইচ্ছা অকল্যাণ পৌঁছায় এবং যাকে ইচ্ছা তার থেকে বিপদ দূর করতে পারে। আর এটা হল আল্লাহ তায়ালার বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে হতে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যেমন ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
তবুও অনেক লোক তাওহীদ এবং তাদের উপর আল্লাহর হক বিষয়ে অজ্ঞ থাকার দরূণ বিভিন্ন বিষয়ে উপকার ও ক্ষতি করার দিক দিয়ে প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা আছে বলে তাদের প্রতি স্বীকৃতি প্রদানের দিক দিয়ে তারা যাদুকরদের ইবাদত বা পূজা করে থাকে। এবং ভীতি, আশঙ্কা ও আশা করার দিক দিয়ে এভাবে যে, তারা তাদের কাছে আশা করে যে, তারা তাদের উমুক উমুক উপকার করতে পারবে কিংবা কোন রোগ-শোক এবং অন্যান্য বিপদ দূর করতে পারবে।
এ জন্য নিশ্চয় যাদুকর হচ্ছে ত্বাগূত, কাফির। ইসলামে তার শাস্তি হচ্ছে তরবারির আঘাতে তার মস্তককে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হবে।
তার কাফির হওয়ার দলীল হচ্ছেঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ

وَاتَّبَعُواْ مَا تَتْلُواْ الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَـكِنَّ الشَّيْاطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ
অর্থঃ এবং সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করতো, তারা ওরই অনুসরণ করছে এবং সুলাইমান কুফরী করেনি, কিন্তু শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদুবিদ্যা এবং যা বাবেলে হারুত-মারুত ফেরেশেতাদ্বয়ের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিক্ষা দিতো, এবং তারা উভয়ে কাউকেও এটা শিক্ষা দিতো না- এমনকি তারা বলতো যে, আমরা পরীক্ষাধীন ছাড়া কিছুই নই, কাজেই তুমি কাফির হয়ো না।
(সূরা বাক্বারাহ, ১০২ নং আয়াত)

কুরতুবী (রঃ) তাফসীরে বলেছেনঃ তাঁর বানীঃ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ ‘সুলাইমান কুফরী করেনি’-এর দ্বারা আল্লাহর পক্ষ হতে সুলাইমান (আঃ)-এ জন্য নির্দোষ প্রমাণ করা হচ্ছে; আর আয়াতে এমন কিছু উল্লেখ নেই যে, কেউ তাঁকে সুলাইমান (আঃ) কুফরীর দিকে সম্পৃক্ত করেছে।
কিন্তু ইয়াহুদীগণ তাকে যাদুর দিকে সম্পৃক্ত করেছে। আর যেহেতু যাদু করা কুফরী সুতরাং এটা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেল যে, কেউ তাকে কুফরীর দিকে সম্পৃক্ত করেছে।
অতঃপর তিনি বলেছেনঃ  وَلَـكِنَّ الشَّيْاطِينَ كَفَرُواْ  “কিন্তু শয়তানেরা কুফরী করেছে”।
অতএব, তিনি যাদু শিক্ষা দেয়ার জন্য তাদের কুফরী প্রমাণ করেছেন।

তিনি আরো বলেছেনঃ মালেক (রঃ)-এর অভিতম হলোঃ যখন কোন মুসলিম স্বয়ং কুফরী কালাম  দ্বারা যাদু করবে, তাকে হত্যা করা হবে, তাকে তাওবাহ করতে বলা হবেনা এবং তার তাওবাহ গ্রহণ করা হবে না। কেননা সে নাস্তিকদের মতো গোপনে একটি কাজ করছে। কেননা আল্লাহ তায়ালা যাদুকে কুফরী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ
“এবং তারা উভয়ে কাউকেও এটা শিক্ষা দিতো না- এমনকি তারা বলতো যে, আমরা পরীক্ষাধীন ছাড়া কিছুই নই, কাজেই তুমি কাফির হয়ো না” আর এটাই আহমাদ ইবনে হাম্বল, আবূ ছাওর, ইছহাক, শাফিয়ী এবং আবূ হানীফার অভিমত এবং উমার, উছমান, ইবনে উমার, হাফসাহ, আবূ মূসা, কাঈল ইবনে সা‘দ এবং সাতজন তাবিয়ী হতে যাদুকরকে হত্যা করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে

শাফিয়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছেঃ যাদুগরকে হত্যা করা হবে না। কিন্তু যদি যাদুর দ্বারা কাউকে হত্যা করে এবং বলে আমি হত্যা করতে চেয়েছি। আর যদি বলে আমি তাকে হত্যা করতে চাইনি, তবে তাকে হত্যা করা হবে না, এতে ভুলক্রমে হত্যার ন্যায় রক্তপণ ওয়াজিব হবে। যদিও তাকে শিষ্টাচারের জন্য অন্যায়ের সমপরিমাণ প্রহার করা হবে।

ইবনুল আরাবী বলেছেনঃ এটা দুই দিক দিয়ে বাতিলঃ
প্রথমঃ তিনি সুলাইমান (আঃ) যাদু শিক্ষা দেননি। যাদুর প্রকৃতরূপ হলো, এটা রচিত এমন কথা, যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্যকে সম্মান করা হয় এবং ওর দিকে ভাগ্য ও সৃষ্টিজগৎকে সম্পৃক্ত করা হয়।


দ্বিতীয়ঃ নিশ্চয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা স্বীয় কিতাবে স্পষ্টভাবে এটাকে কুফরী বলেছেন। তিনি বলেছেনঃ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ “সুলাইমান (আঃ) কুফরী করেনি”-অর্থাৎ যাদুর কথার মাধ্যমে। وَلَـكِنَّ الشَّيْاطِينَ كَفَرُواْ “কিন্তু শয়তানেরা কুফরী করেছে,” অর্থাৎ যাদুর মাধ্যমে এবং এটাকে শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে। আর হারুত ও মারুত ফেরেশেতাদ্বয় বলতেনঃ  إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ “আমরা পরীক্ষাধীন ছাড়া কিছুই নই, কাজেই তুমি কাফির হয়ো না”-আর এটা বক্তব্যের গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
(আল-জামি লি আহকামিল কুরআন, ২/৩৪, ৪৭-৪৮)
শাইখ, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রঃ) ঈমান ধ্বংসকারী বিষয়সমূহ যা উক্ত ব্যক্তিকে মিল্লাত থেকে বের করে দেয়-এর মধ্যে একটি ‘যাদু’ এবং এর দ্বারা আমল করাকে উল্লেখ করেছেন।
(আর-রাসায়িলুশ-শাখছিয়াহ, ৬৯ পৃঃ)

এবং যাযিরাতুল আরব (আরব উপদ্বীপে) তাওহীদবাদী আলেমদের মধ্যে তাঁর সন্তান-সন্ততি ও পৌত্রগণ উক্ত বিষয়ে তার অনুসরণ করেছেন।
শাইখ ‘আল-ইকনা’ গ্রন্থের রচয়িতা হতে উল্লেখ করেছেনঃ যাদু শিক্ষা করা, শিক্ষা দেয়া এবং এর চর্চা করা হারাম। এটা শিক্ষা গ্রহণ করলে এবং চর্চা করলে তাকে কাফির আখ্যায়িত করা হবে। সে এটাকে হারাম বিশ্বাস করুক, কিংবা বৈধ বিশ্বাস করুক এতে কোন পার্থক্য হবে না। অতএব, আপনি উক্ত বক্তব্য নিয়ে চিন্তা করুন!

(আর-রাসায়িলুশ-শাখছিয়াহ, ২১৩ পৃঃ)

Friday, May 30, 2014

কেয়ামতের লক্ষণ, দাজ্জাল, ঈসা (আঃ), ইয়াজুজ-মাজুজ...

আলহামদুলিল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহি নাহনাদুহু ওয়ানাস্তা ইনুহু ওয়ানাস্তাগফিরুহু ওয়ানা'উজুবিল্লাহিমিন সুরুরি আনফুচিনা ওয়ামিন চাই'ইয়াতি আ'মালিনা, মাইঈয়াহদিহিল্লাহু ফালা মুদিল্লালাহ ওয়ামাই উদিলিলহু ফালা হাদিয়ালাহ। ওয়াশহাদুয়াল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরীকালাহু ওয়ানাশাহাদুয়ান্না মুহাম্মাদান আবদুহু রাসুলুহু।
আম্মা বাদ আউজুবিল্লা হিমিনাশশাইতনির রাজিম
.
বিসমিল্লাহির  রাহমানির  রাহিম .




সুবহা'নাল্লাহ ! এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সহীহ মুসলিমে একটা মাত্র হাদীস এতো বড়!
অনেক হাদীস গুলোকে এক সাথেই জানা যায় !!

বিভিন্ন ফিৎনা ও কিয়ামতের নিদর্শন::
সহিহ মুসলিম :: বই ৪১ :: হাদিস ৭০১৫ ।

নাওয়াস ইবন সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, একদা সকালে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন । আলোচনা কালে তিনি কখনো আওয়াজ ছোট করলেন,
আবার কখনো আওয়াজ বড় করলেন । ফলে আমরা মনে করলাম যে, দাজ্জাল বৃক্ষরাজির এ ঝাড়ের মধ্যেই বুঝি এসে পড়েছে । অতঃপর আমরা সন্ধ্যায় আবার তাঁর নিকট গেলাম ।
তিনি আমাদের মাঝে এর কিছু আলামত দেখতে পেয়ে বললেন, তোমাদের কি অবস্হা ? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা) ! আপনি সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন
এবং এতে আপনি কখনো আওয়াজ ছোট করেছেন, আবার কখনো বড় করেছন । ফলে আমরা মনে করেছি যে, দাজ্জাল বুঝি এ ঝাড়ের মধ্যেই বিদ্যমান । এ কথা শুনে তিনি বললেন,
দাজ্জাল নয়, বরং তোমাদের ব্যাপারে অন্য কিছুর আমি অধিক আশংকা করছি । শোন, আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকা অবস্হায় যদি দাজ্জালের আবির্ভাব হয় তবে আমি নিজেই তাকে প্রতিহত করব ।
তোমাদের প্রয়োজন হবে না। আর যদি আমি তোমাদের মাঝে না থাকা অবস্হায় দাজ্জালের আবির্ভাব হয়, তবে প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি নিজের পক্ষ হতে একে প্রতিহত করবে ।
প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহ তাআলাই হলেন আমার পক্ষ হতে তত্ত্বাবধায়ক । দাজ্জাল যুবক এবং কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট হবে । তার চক্ষু হবে স্ফীত আঙ্গূরের ন্যায় । আমি তাকে কাফির আবদুল উযযা ইবন কুতনের সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি ।
তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূড়া কাহফের প্রথমোক্ত আয়াত সমুহ পাঠ করে । সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত হবে । সে ডানে-বামে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে । হে আল্লাহর বান্দাগণ! অবিচল থাকবে ।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা) ! সে পৃথিবীতে কত দিন অবস্হান করবে ? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে ।
অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে । আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যেদিন এক বছরের সমান হবে, উহাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে ? জবাবে তিনি বললেন,
না, বরং তোমরা এদিন হিসাবে ঐ দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিবে । আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা) ! দাজ্জাল পৃথিবীতে কেমন করে চলবে ? তিনি বললেন, বাতাসে পরিচালিত মেঘের ন্যায় ।
সে এক সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদেরকে কুফরীর দিকে আহবান করবে । তারা তার উপর ঈমান আনহান করবে এবং তার ডাকে সাড়া দিবে । অতঃপর সে আকাশকে হুকুম করবে । আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে
এবং ভূমিকে নির্দেশ দিরে, ভূমি গাছ-পালা ও শষ্য উদগত করবে । এরপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদী পশুগুলো পূর্বের তূলনায় অধিক লম্বা, কুজ, প্রশস্ত স্তন এবং উদরপূর্ণ অবস্হায় তাদের নিকট ফিরে আসবে ।
অতঃপর দাজ্জাল অপর এক সম্প্রদায়ের নিকট আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি আহবান করবে । তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে । ফলে সে তাদের নিকট হতে ফিরে চলে যাবে । অমনি তাদের মাঝে
দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে উহাকে সম্মোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও ।
তখন যমীনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার চতূস্পার্শে একত্রিত হতে থাকবে, যেমন মধু মক্ষিকা তাদের সর্দারের চারিপাশে সমবেত হয় । তৎপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি
দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্হলের ন্যায় দু-ফাক করে ফেলবে । অতঃপর সে পূনরায় তাকে ডাকবে । যুবক দীপ্তমান হাস্যোজ্জল চেহারায় তার দিকে এগিয়ে আসবে । এ সময় আল্লাহ রাববুল আলামীন
মারইয়াম তনয় ঈসা (আঃ)-কে প্রেরণ করবেন । তিনি দুই ফিরিশতার কাধের উপর ভর করে গোলানা রং এর জোড়া পরিহিত অবস্হায় দামেশক নগরীর পূর্ব দিকের শুভ্র মিম্বারের উপর অবতরণ করবেন ।
যখন তিনি তার মাথা ঝুঁকাবেন তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম তাঁর শরীর থেকে গড়িযে পড়বে। তিনি যে কোন কাফিরের নিকট যাবেন সেই তাঁর শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে । তাঁর যতটৈ পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও
ততাদূর পর্যন্ত পৌছবে । তিনি দাজ্জালকে তালাশ করতে থাকবেন । অবশেষে তাকে লুদ- নামক স্থানে গিয়ে পাকড়াও করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন । অতঃপর ঈসা (আঃ) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন,
যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের ফিতনা থেকে হিফাযত করেছেন । তাদের নিকট গিয়ে তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহ সম্পর্কে সংবাদ দিবেন ।
এমতাবস্হায় আল্লাহ তাআলা ঈসা (আঃ)-এর প্রতি এ মর্মে অহী নাযিল করবেন যে, আমি আমার বান্দাদেরকে নাযিল করেছি, যাদের সাথে কারোই যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই ।
সুতরাং তুমি তাদেরকে নিয়ে ভূর পর্বতে চলে যাও । তখন আল্লাহ তাআলা ইয়াজুয-মাযুয সম্প্রদায়কে প্রেরণ করবেন । তারা প্রতি উচু ভূমি হতে ছুটে আসবে । তাদের প্রথম দলটি তবরিস্তান সমুদ্রের নিকট এসে এর সমুদয় পানি পান করে নিঃশেষ করে দিবে ।
অতঃপর তাদের সর্বশেষ দলটি এ স্হান দিয়ে যাত্রাকালে বলবে, এ সমুদ্রে এক সময় অবশ্যই পানি ছিল । তারা আল্লাহর নবী (সা) ঈসা (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে অবরোধ করে রাখবে ।
ফলে তাদের নিকট একটি বলদের মাথা বর্তমানে তোমাদের নিকট একশ দীনারের মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যবান প্রতিপন্ন হবে । তখন আল্লাহর নবী (সা) ঈসা (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন ।
ফলে আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুয-মাজুজ সম্প্রদায়ের প্রতি আযাব প্রেরণ করবেন । তাদের ঘাড়ে এক প্রকার পোকা হবে । এতে একজন মানুষের মৃত্যুর ন্যায় তালাও সবাই মরে খতম হয়ে যাবে । অতঃপর ঈসা (আ) ও
তাঁর সঙ্গীগণ পাহাড় হতে যমীনে বেরিয়ে আসবেন । কিন্তু তারা অর্ধ হাত জায়গাও এমন পাবেন না যথায় তাদের পঁচা লাশ ও লাশের দুর্গন্ধ নেই । অতঃপর ঈসা (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীগণ পূনরায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন ।
তখন আল্লাহ তাআলা উটের ঘাড়ের ন্যায় লহল এক ধরনের পাখি প্রেরণ করবেন । তারা তাদেরকে বহন করে আল্লাহর ইচ্ছা মাফিক স্থানে নিয়ে ফেলবে । এরপর আল্লাহ এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্যণ করবেন যার ফলে কাচা-পাকা কোন ঘরই আর বাকী থাকবে না ।
এতে যমীন বিধৌত হয়ে উদ্ভিদ শূন্য মৃত্তিকায় পরিণত হবে । অতঃপর পূনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে যমীন! তুমি আবার মৃত্তিকায় পরিণত হবে। অতঃপর পুনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে যমীন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন কর
এবং তোমার বরকত ফিরিয়ে দাও। সেদিন একদল মানুষ একটি ডালিম ভক্ষণ করবে এবং এর বাকলের নীচে লোকেরা ছায়া গ্রহণ করবে । দুধের মধ্যে বরকত হবে । ফলে দুগ্নবতী একটি উটই একদল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে, দুগ্ধবতী একটি গাভী
একগোত্রীয় মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে এবং যথেষ্ট হবে দুগ্ধবতী একটি বকরী এক দাদার সন্তানের জন্য । এ সময় আল্লাহ তায়াআলা অত্যন্ত আরামদায়ক একটি বাতাস প্রেরণ করবেন । এ বাতাস সমস্ত ঈমানদার লোকদের বগলে গিয়ে লাগবে
এবং সমস্ত মুমিন মুসলিমদের রুহ কবয করে নিয়ে যাবে । তখন একমাত্র মন্দ লোকেরাই এ পৃথিবীতে বাকী থাকবে । তারা গাধার ন্যায় পরস্পর একে অন্যের সাথে ব্যাক্তিচারে লিপ্ত হবে । এদের উপরই কিয়ামত কায়িম হবে ।

Thursday, May 29, 2014

সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে আহলে হাদীসদের দৃষ্টিভঙ্গি


আলহামদুলিল্লাহ্‌ ওয়াস সালাতু আসসালাম ওয়ালা সা'ঈদেনা আলা মুহাম্মাদ ওয়ালা আলিহী ওয়া আসসাহাবী আসাল্লাম তাসলিমান কাসিরা।।আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আচ্ছালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু।


সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা ও সম্মান সস্পর্কে কুরআন ও হাদীসের বিস্তারিত বর্ণনা এখানে নিষ্প্রয়োজন। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের একটা শিশুও সাহাবায়ে-কেরামের মর্যাদার ব্যাপারে সচেতন। সাহাবায়ে কেরাম রা. যেমন ছিলেন সত্যের মাপকাঠি, তেমনি তারা দুনিয়া থেকেই আল্লাহর সন্তুষ্টির ঘোষণাপ্রাপ্ত। ইসলামের সঠিক পথ নির্ণয়ের মাপকাঠি হলো, সাহাবায়ে কেরাম রা. এর অনুসৃত পথের অনুসরণ। যুগে যুগে যারাই সাহাবায়ে কেরাম রা. এর পথ থেকে দূরে সরে গিয়েছে, তারাই গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট হয়েছে। হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্যকারী হলেন সাহাবায়ে কেরাম। যারা সাহাবায়ে কেরামকে যথাযথ সম্মান করে, তাদের অনুসৃত পথে চলে,তারাই মুলত: কুরআন ও সুন্নাহের প্রকৃত অনুসারী। সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পথ ব্যতীত লক্ষ-কোটি বারও কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণের দাবী করলেও তারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট।

যুগে যুগে যারা সাহাবায়ে কেরামের বুঝকে পায়ে দলে, তাদের অনুসৃত পথকে দূরে সরিয়ে নিজেদের মনগড়া মতবাদ চালু করেছে, তারাই মুলত: ভ্রষ্টতার গভীরে নিমজ্জিত হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের যথার্থ সম্মান ও মর্যাদা না দিয় যারা তাদের সমালোচনা করেছে, তারাই যুগে যুগে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। সুতরাং হক ও বাতিলের পরিচয়ের জন্য আমাদের বিস্তর গোবেষণার প্রয়োজন নেই। সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, আমরা দেখবো, কারা রাসূল স. এর সাহাবাদের অনুসৃত পথে চলে। যারা কুরআন ও সুন্নাহকে সাহাবায়ে কেরাম এর বুঝ অনুযায়ী অনুসরণ করে তারাই মুলত: মুক্তিপ্রাপ্ত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত দল। এর বাইরে যতো দল, মত বা মতবাদ রয়েছে, সবগুলোই ভ্রষ্টতা ও গোমরাহী।

একবার মোনাজেরে জামান হযরত মাওলানা আমীন সফদর রহ. এর কাছে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলো, জামাতে ইসলাম বা মাওলানা মওদুদী ও দেওবন্দী আলেমদের মাঝে পার্থক্য কী?
তিনি তাকে বললেন, হায়াতুস সাহাবা বইটি নিয়ে যান। এক সপ্তাহ পড়ার পর আমার কাছে আসবেন।
লোকটি এক সপ্তাহ পরে আবার এলো। আমীন সফদর রহ. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই এক সপ্তাহে হায়াতুস সাহাবা পড়ে কী শিখেছেন?
লোকটি বলল, বইটি পড়ে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা ও মহব্বত বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। তাদের প্রতি সীমাহীন ভক্তি ও শ্রদ্ধা জন্ম নিয়েছে।
আমীন সফদর রহ. বললেন, এবার আপনি মাওলানা মওদুদী সাহেবের লেখা খেলাফত ও মুলুকিয়াত বইটা নিয়ে যান। এক সপ্তাহ বইটা পড়ে আমাকে প্রতিক্রিয়া জানাবেন।

লোকটি এক সপ্তাহ পরে এসে বলল, এই বই পড়ে তো সাহাবায়ে কেরামের প্রতি অন্তরে ঘৃণাবোধ তৈরি হয়েছে। তাদের সমালোচনা ও দোষত্রুটিই শুধু চোখে ভাসে।
আমীন সফদর রহ. বললেন, এটিই হলো দেওবন্দ ও মাওলানা মওদুদীর মাঝে পার্থক্য।
বর্তমান আহলে হাদীসদের সাথে আমাদের বিরোধ শুধু শাখাগত মাসআলা নিয়ে নয়। বরং এদের সাথে আমাদের বিরোধ মৌলিক আকিদা বিষয়ে। এদের সাথে আমাদের বিরোধ সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ ও তাদের মর্যাদা বিষয়ে। আহলে হাদীসদের সাথে আমাদের বিরোধকে যারা একান্ত শাখাগত মাসআলা কেন্দ্রিক মনে করে থাকেন, তারা মারাত্মক ভুলের মধ্যে রয়েছেন। আহলে হাদীসদের সাথে আমাদের অধিকাংশ বিরোধ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মৌলিক আকিদা বিশ্বাস সম্পর্কিত। আমাদের এই সিরিজে সাহাবায়ে কেরাম রা. সম্পর্কে আহলে হাদীসদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।



পবিত্র কুরআনে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা:

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সাহাবায়ে কেরাম রা. এর প্রশংসা করেছেন। তাদের মর্যাদা ও অবস্থান তুলে ধরেছেন।

১. আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴿১০০﴾ سورة التوبة

‘মুহাজির ও আনসারদের প্রথম অগ্রবর্তী দল এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, এটাই মহা সাফল্য’

[সূরা তওবা-১০০]

২. আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন:
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآَزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا ﴿২৯﴾ سورة الفتح

‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্ট কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদার প্রভাবের চিহ্ন পরিস্ফুট থাকবে। তাওরাতে তাদের বর্ণনা এরূপ। আর ইঞ্জিলে তাদের বর্ণনা হল যেমন একটি চারাগাছ, যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অত:পর তা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে, যা চাষীকে আনন্দে অভিভূত করে যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।

[সূরা আল Ñ ফাতহ, ২৯। ]


৩. অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:
لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا وَيَنْصُرُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ ﴿৮﴾ وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿৯﴾ سورة الحشر

‘এ সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরগণের জন্য যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি হতে উৎখাত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে। তারাই সত্যবাদী। আর এ সম্পদ তাদের জন্যও, যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এ নগরীতে বসবাস করেছে এবং ঈমান এনেছে। তারা মুহাজিরদেরকে ভাল-বাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তুরে ঈর্ষা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয়। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।

[সূরা-হাশর, ৮-৯]

৪. অপর জায়গায় এরশাদ হয়েছে–
لَّقَدْ رَضِيَ اللَّـهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا

অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লহ তায়া’লা ঐ সকল মুসলমানদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন (যাহারা আপনার সফর সঙ্গী), যখন তাঁহারা আপনার সাথে গাছের নিচে অঙ্গীকার করছিলো এবং তাঁদের অন্তরে যা কিছু (ইখলাস ও মজবুতি) ছিল তাও আল্লহ তায়া’লার জানা ছিল, আর আল্লহ তায়া’লা তাঁদের অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন এবং তাদেরকে একটি নিকটবর্তী বিজয় দান করলেন। (এর দ্বারা খায়বরের বিজয় কে বুঝানো হয়েছে, যা একেবারে নিকটবর্তী সময়ে হয়েছে) আর প্রচুর গনিমতও দান করলেন।

(সূরা ফাতহঃ ১৮)


৫. সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের ব্যাপারে আল্লহ তায়া’লা এরশাদ করেন–
مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّـهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا

অর্থঃ ঐ সকল মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা আল্লহর সাথে যে ওয়াদা করেছিলো তাতে সত্য প্রমানিত হয়েছে। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা নিজ মানত পূর্ণ করেছে (অর্থাৎ শহীদ হয়ে গিয়েছে।) আর কিছু তাদের মধ্য হতে এর জন্য আগ্রহী এবং অপেক্ষায় আছে (এখনও শহীদ হয়নি) এবং নিজেদের ইচ্ছার মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন ও রদ-বদল ঘটায়নি। (সূরা আহযাবঃ ২৩)


৬. সূরা নিসার ৯৫নং ও সূরা হাদীদের ১০নং আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وكلا وعد الله الحسنى

অর্থাৎ, তাদের (মধ্যে পারস্পরিক তারতম্য থাকা সত্ত্বেও) সবাইকে আল্লাহ তা‘আলা হুসনা তথা উত্তম পরিণতির (জান্নাত ও মাগফিরাতের) ওয়াদা দিয়েছেন।
এ আয়াতে আল্রাহ তায়ালা সাহাবায়ে কেরামের জন্য হুসনা এর ওয়াদা করেছেন।সূরা আম্বিয়ার ১০১নং আয়াতে হুসনা লাভকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, إن الذين سبقت لهم منا الحسنى أولئك عنها مبعدون অর্থাৎ, যাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে পূর্বেই হুসনার ওয়াদা হয়ে গেছে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে।


৭. সূরা হুজুরাতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
o لكن الله حبب إليكم الإيمان و زينه في قلوبكم و كره إليكم الكفر و الفسوق و العصيانط أولئك هم الراشدون

অর্থাৎ, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন। পান্তরে কুফর, শিরক, পাপাচার ও নাফরমানির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই (সাহাবীগণ) সৎপথ অবলম্বনকারী।

[সূরা হুজুরাত-৮]

৮. সূরা হুজুরাতের ১৫ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
oإنما المؤمنون الذين امنوا بالله و رسوله ثم لم يرتابوا و جهدوا بأموالهم و أنفسهم في سبيل اللهط أولئك هم الصدقون

অর্থাৎ, তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে। তারাই (সাহাবীগণ) সত্যনিষ্ঠ (বা সত্যবাদী)।

[সূরা হুজুরাত-১৫]

৯. আল্লাহ তায়ালা সাহাবায়ে কেরামের ঈমানকে মাপকাঠি সাব্যস্ত করে বলেছেন,

فإن امنوا بمثل ما امنتم به فقد اهتدوا و إن تولوا فإنما هم في شقاق

অর্থাৎ, যদি তারা ঈমান আনে, যেরূপ তোমরা ঈমান এনেছ, তবে তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা (এথেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারা হঠকারিতায় রয়েছে।

[সূরা বাক্বারা-১৩৭]

১০. সাহাবায়ে কেরাম এর ইমানের গ্রহণযোগ্যতা এবং যারা সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে উপহাস করেছে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
oو إذا قيل لهم امنوا كما امن الناس قالوا أنؤمن كما امن السفهاء ألا إنهم هم السفهاء و لكن لا يعلمون

অর্থাৎ, যখন তাদেরকে বলা হয়, মানুষরা অর্থাৎ সাহাবীরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন। তখন তারা বলে আমরাও কি বোকাদের মতো ঈমান আনব? মনে রেখো প্রকৃতপে তারাই বোকা; কিন্তু তারা তা বোঝে না।

[সূরা বাক্বারা-১৩]

১১. সূরা আনফালে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
oأولئك هم المؤمنون حقا لهم درجت عند ربهم و مغفرة و رزق كريم

অর্থাৎ, এমন সব লোকই (সাহাবীরা) সত্যিকারের মুমিন (যাদের ভেতর ও বাহির এক রকম এবং মুখ ও অন্তর ঐক্যবদ্ধ)। তাদের জন্য রয়েছে স্বীয় পরওয়ারদিগারের নিকট সুউচ্চ মর্যাদা ও মাগফিরাত এবং সম্মানজনক রিয্ক। [সূরা আনফাল-৪]


১২. আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

وألزمهم كلمة التقوى وكانوا أحق بها

অর্থাৎ, (আল্লাহ তা‘আলা) তাদের (অর্থাৎ সাহাবীদের) জন্য কালিমায়ে তাক্বওয়া তথা সংযমের দায়িত্ব অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুতঃ তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত।

(সূরা ফাত্হ-২৬)

  • রাসূল স. এর হাদীসে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা: 

     

     ১. বোখারী-মুসলিমের সহীহ হাদীসে রয়েছে,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : خير أمتي قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم

হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রসূল (স.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা আমার যুগে রয়েছে। অতঃপর তাদরে পরবর্তী যুগের উম্মাত (তথা তাবেয়ীগনের যুগ) অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত। (অর্থাৎ, তাবয়ে তাবেয়ীনের যুগ) (বুখারী ৪/২৮৭- ২৮৮- মুসলিম ৪/১৯৬৪)


২. সাহাবাদের মর্যাদা সম্মন্ধে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেনঃ

الله الله فى أصحابى لا تتخذوهم غرضا من بعدى فمن أحبهم فبحبى أحبهم ومن أبغضهم فببغضى أبغضهم
অর্থাত-সাবধান!তোমরা আমার সাহাবীগণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাঁদেরকে (তিরস্কারের) লক্ষ্যবস্তু বানাইও না। যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে সে আমার প্রতি ভালোবাসা বশেই তাঁদেরকে ভালোবাসে। আর যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতি বিদ্বেষবশতঃ তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে”।(তিরমিযী-৩৮৬১, ইবনে হিব্বান, হা. ২২৮৪, মুসনাদে আহমদ, খ.৪, পৃ.৮৭, আস-সুন্নাহ, ইবনে আবি আসেম, হা.৯৯২)

৩. তিনি আরো ইরশাদ করেছেনঃ

لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِى فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيفَهُ
অর্থাত-তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিওনা। তোমাদের মধ্যে যদি কেহ উহুদ সমপরিমাণ স্বর্ণও যদি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে,তবেও তাঁদের এক মুদ্দ বা তার অর্ধেক পরিমাণ(এক মুদ=১ রতল। আল্লামা শামী(রাঃ)বয়ান করেছেন যে, এক মুদ্দ ২৬০ দিরহামের সমপরিমাণ। দ্রষ্টব্যঃ আওযানে শরিয়্যাহ)আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার সমতূল্য হবেনা।
(সহি বুখারী-হাদিস নং ৩৭১৭)

৪. হযরত ইবনে আব্বাস(রাঃ)হতে বর্ণিতঃ রাসুলুলুল্লাহ(সঃ) ইরশাদ করেছেন- ” من سب اصحابي فعليه لعنة الله والملائكة والناس اجمعين ” .

অর্থাৎ -“যারা আমার সাহাবীদেরকে গালী দেয়, তাদের প্রতি আল্লাহর,ফেরেস্তাদের,এবং জগতবাসীর অভিশাপ বর্ষিত হোক।
(তাবরানী ফিল কাবির, হা.১২৭০৯)

৪. হযরত উমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূল স. বলেন,

اكرموا أصحابى فإنهم خياركم
অর্থাৎ-তোমরা আমার সাহাবীগণকে সম্মান কর। কেননা তাঁহারা তোমাদের মধ্যকার উত্তম মানব।
[মুসনাদে আহমাদ, খ.১, পৃ.১১২, তাহকীক, আহমাদ শাকের, নাসায়ী, হাকেম, মেশকাত, খ.৩, পৃ.১৬৯৫]

৫. হযরত আবু বুরদাহ(রাঃ) হতে বর্ণিত যে,রাসুলুল্লাহ(সঃ) ইরশাদ করেছেন যে

عن أبى بردة رضي الله عنه قال : قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم – النجوم أمنة للسماء فإذا ذهبت النجوم أتى السماء ما توعد ، وأنا أمنة لأصحابي فإذا ذهبت أتى أصحابي ما يوعدون ، وأصحابي أمنة لأمتي فإذا ذهب أصحابي أتى أمتي ما يوعدون.
অর্থঃ নক্ষত্র সমুহ আসমানের জন্য আমানত স্বরুপ। যখন নক্ষত্রগুলি বিলুপ্ত হয়ে যাবে,তখন আসমানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কেয়ামত চলে আসবে। এবং আমি আমার সাহাবীদের জন্য আমানত স্বরুপ। অতএব যখন আমি ইহকাল ত্যাগ করব তখন তাঁদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁদের(সাহাবাদের) মধ্যে ইজতেহাদি মতানৈক্য দেখা দিবে। এবং আমার সাহাবীরা উম্মতের জন্য আমানত স্বরুপ। অতএব যখন তাঁদের যুগের অবসান ঘটবে তখন আমার উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ফেতনা-ফ্যাসাদের সুত্রপাত ঘটবে। [মুসলিম শরীফ, হা.২৫৩১]

৬. ইরবায ইবনে সারিয়া(রাঃ)হতে বর্ণিত যে,রাসুলুল্লাহ(সাঃ)ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা

قال النبى صلى الله عليه وسلم: عليكم بسنتى وسنة خلفاء الراشدين المهدين
অর্থঃ আমার এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীন রা. এর সুন্নতকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে।
(আবু দাউদ হা.৪৬০৭,তিরমিযী-২৮৯১,ইবনে মাজা [ভূমিকা, ৪২], মুসনাদে আহমদ হা.১৭৬০৬, মুসনাদে বাযযার,ইবনে হিব্বান,মুসতাদরাক লিল-হাকিম,তারীখে দিমাশক লি-ইবনে আসাকির, আল-মু’জামুল কাবীর, হা. ৬২৩, আল-আওসাত, আল-কাবীর লিত্তাবরানী)

৭. রাসুলে কারীম(সাঃ) সমস্ত উম্মতকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলে গেছেনঃ

ستفترق أمتى ثلاثا وسبعين فرقة كلهم فى النار إلا واحدة : قالوا من هى يا رسول الله! قال: ما أ نا عليه وأصحابى
অর্থঃ“ অতিশীঘ্র আমার উম্মত তেহাত্তর(৭৩) ফের্কায় বিভক্ত হয়ে পড়বে। তন্মধ্যে মাত্র একটি দলই মুক্তিপ্রাপ্ত এবং জান্নাতী হবে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেনঃ সেই মুক্তিপ্রাপ্ত সৌভাগ্যশালী দলটি কারা এবং এত বড় সৌভাগ্য লাভের ভিত্তি কোন নীতি বা আদর্শের উপর ? উত্তরে নবী(সাঃ) বললেন,যে নীতি,তরীকা ও আদর্শের উপর আমি এবং আমার সাহাবায়ে কেরাম আছেন।(তিরমিজী শরীফ, হা.২৬৪০, ইবনে মাজা, হা.৪৭৯, মুসনাদে আহমদ খ.৪, পৃ.১০২, আল-মুসতাদরাক, খ.১, পৃ.১২৮)

৮. হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূল স. বলেন,

آية الإيمان حب الأنصار ، وآية النفاق بغض الانصار
অর্থ: ঈমানের নিদর্শন হলো, আনসারী সাহাবীদের মহব্বত এবং মুনাফেকীর নিদর্শন হলো, আনসারীদের প্রতি বিদ্বেষপোষণ।
[ বোখারী শরীফ, খ.৭, পৃ.১১৩, মুসলিম শরীফ, হা.৭৪, ইমান অধ্যায়]

৯. রাসূল স. ইরশাদ করেন,

لا تزالون بخير ما دام فيكم من رآني وصحبني، والله لا تزالون بخير ما دام فيكم من رأي من رآني وصاحبني
অর্থ: তোমরা ততোদিন পর্যন্ত কল্যাণের মাঝে থাকবে যতক্ষণ তোমাদের মাঝে আমাকে যারা দেখেছে এবং আমার সংস্পর্শে থেকেছে তারা বর্তমান থাকবে। আল্লাহর শপথ, তোমরা কল্যানের মাঝে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মাঝে এমন লোক থাকবে, যারা আমার সাহাবী ও সংস্পর্শ অবলম্বনকারীদেরকে দেখেছে।
[মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, খ.১২, পৃ.১৭৮, ত্ববরানী ফিল কাবির, খ.২২, পৃ.৮৫, ফাতহুল বারী, খ.৫, পৃ.৭]

সাহাবায়ে কেরাম রা. এর সমালোচনার ভয়ঙ্কর পরিণতি:

ইমাম মালেক রহ. বলেন,

إنما هؤلاء أقوام أرادوا القدح في النبي صلى الله عليه وسلم فلم يمكنهم ذلك ، فقدحوا في أصحابه حتى يقال رجل سوء و لو كان رجلاً صالحاً لكان أصحابه صالحين
অর্থ: যারা সাহাবাদের ব্যপারে কুৎসা রটনা করে এবং তাদেরকে গালি দেয় এরা মূলত: রসূল (স.) এর বিরুদ্ধেও কুৎসা রটাতে চেয়েছিলো, কিন্তু তাদের দ্বারা তা সম্ভব হয়নি। তাই তারা সাহাবাগণের ব্যাপারে মিথ্যা রটিয়েছে এবং বলেছে, অমুক সাহাবী নিকৃষ্ট লোক ছিল, অমুকে এমন ছিল তেমন ছিল ইত্যাদি। রাসূল স. যদি নেককার ও সৎ হয়ে থাকেন, তবে তাদের নিকট তার সাহাবীরাও সৎ ও নেককার বিবেচিত হতো।
(আস-সরিমূল মাসলূল, পৃ. ৫৫৩)

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন,

إذا رأيت رجلا يذكر أحدا من الصحابة بسوء فاتهمه على الإسلام
অর্থাৎ যদি কাউকে রাসূল স. এর কোন সাহাবীর সমালোচনা করতে দেখো, তবে তার ইসলামের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করো।
[আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খ.৮, পৃ.১৪২]

আবূ যুর'আ রহ. বলেন,

فإذا رأيت الرجل ينتقص أحدا من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فأعلم انه زنديق، وذلك ان الرسول صلى الله عليه وسلم عندنا حق، والقرآن حق، وإنما أدى إلينا هذا القرآن والسنة أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم، وإنما يريدون أن يجرحوا شهودنا ليبطلوا الكتاب والسنة، والجرح بهم اولى وهم زنادقة

¤ বলেন, তোমরা যখন কাউকে কোন সাহাবীর অবমাননা করতে দেখ, তখন বিশ্বাস করে নাও যে, সে যিন্দীক ও বির্ধমী। তা এ জন্য যে, আমাদের নিকট রাসূল স. সত্য নবী, পবিত্র কুরআন সত্য; কুরআন হাদীস তথা পুরা দ্বীন যা আমাদের পর্যন্ত পৌছেছে, তার প্রথম যোগসূত্র হলেন সম্মানিত এ জামাত। সুতরাং যে ব্যক্তি সাহাবাগণের সমলোচনা করবে, সে আমাদের বিশ্বস্ত সাক্ষীদের সমালোচনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ দ্বীনকেঅগ্রাহ্য বলে ঘোষণা করতে চায়। অর্থাত্ ইসলামের মূলভিত্তি ধ্বংস করে দিতে চায়। সুতরাং এজাতীয় লোকদের সমালোচনা করা উত্তম বরং এরা হলো যিন্দিক।
[আল-কিফায়া, খতীব বাগদাদী, পৃ.৯৭]

¤ ইমাম আবূ আমর ইবনুস সালাহ রহ. বলেন, কুরআন হাদীস ও উম্মতের ইজমা হতে এ বিষয়টি সিদ্ধান্তকৃত যে, কোন সাহাবী রাযি. এর পূত- পবিত্রতা সম্পর্কে প্রশ্ন করারও সুযোগ নেই।

- উলূমুল হাদীসঃ ২৬৪

¤ ইমাম ইবনে হুমাম রহ. বলেন-

আহলুস-সুন্নাত ওয়াল-জামা'আতের আকীদা হল, সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম রাযি. কে পূত ও পবিত্র মনে করা, তাঁদের উপর আপত্তি উত্থাপন থেকে বেঁচে থাকা এবং তাদের প্রশংসা করা ওয়াজিব।
মুসায়েরা- ১৩২পৃঃ

¤ সকল সাহাবা রাযি. এর

সঙ্গে ভালবাসা পোষণ করা এবং তাঁদের মাঝে পারস্পরিক যে সকল ঘটনা সমূহ সংঘটিত হয়েছে তা লিখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করা, অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করা, শ্রবণ
করা এবং করানো হতে বিরত
থাকা এবং তাঁদের সুনাম
সুখ্যাতি আলোচনা করা, তাঁদের
প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা এবং তাঁদের প্রতি ভালবাসা রাখা, তাঁদের প্রতি কোন প্রকার আপত্তি প্রর্দশন থেকে বেচে থাকা ফরয।
(শরহে আকীদায়ে সাফারানীঃ ২/৩৮৬)

  • সাহাবীগণের সমালোচনাকারীদের সম্পর্কে সালাফে-সালেহীনের অবস্থান:

সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনাকারীদের সম্পর্কে সালাফে-সালেহীনের কিছু বক্তব্য পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ইমামের অনেক বক্তব্য রয়েছে। সালাফে-সালেহীনের এসব বক্তব্যের সারমর্ম নিচে উল্লেখ করা হলো,
১. সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুমকে গালি দেয়া, তাদের সম্পর্কে অশোভনীয় ভাষা ব্যবহার, তাদের সমালোচনা, তাদের ব্যাপারে কুৎসা রটনা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। এজাতীয় কাজের কারণে একজন মুসলিম আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত থেকে বের হয়ে পথভ্রষ্ট ফেরকার অন্তর্ভূক্ত হয়।
২. সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা, তাদের প্রতি কুধারণা, এবং তাদের কুৎসা রটনা করা বিধর্মী যিন্দিকদের কাজ।
৩. সাহাবায়ে কেরাম রা. সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করা ওয়াজিব।
৪. সর্বদা সাহাবায়ে কেরাম রা. এর ভালো গুণাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা উচিৎ।
৫. সব সাহাবীই রাসূল স. এর প্রিয় ছিলেন।
৬. সাহাবায়ে কেরাম রা. এর সমালোচনাকারীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা জরুরি।
৭. অনেক সময় সাহাবীদেরকে গালা-গালি করার কারণে মানুষ ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়।
৮. সাহাবায়ে কেরাম রা. এর প্রতি ভালোবাসা ঈমানের শর্ত ও চাহিদা, তাদের প্রতি বিদ্বেষ বেইমানীর আলামত।

  • সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে কাজী শাওকানী ও নওযাব সিদ্দিক হাসান খানের জঘন্য বক্তব্য:

এ পর্বে আহলে হাদীসদের বিখ্যাত দুই গুরুর বক্তব্য তুলে ধরা হলো।
হযরত ত্বলহা ও যোবায়ের রা. এর ব্যাপারে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ:
কাজী শাওকানী ওবালুল গামাম নামে একটি কিতাব লিখেছেন। কিতাবটি তাহকীক করেছেন, মুহাম্মাদ সাবহী হাসান হাল্লাক। এটি প্রকাশ করেছে, মাকতাবাতুল ইলম, জিদ্দা ও মাকতাবায়ে ইবনে তাইমিয়া, কায়রো।
প্রথম প্রকাশ, ১৪১৬ হি:

ওবালুল গামামের দ্বিতীয় খন্ড, পৃ.৪১৪-৪১৫ পৃষ্ঠায় হযরত ত্বলহা ও হযরত যুবায়ের রা. সম্পর্কে কাজী শাওকানী লিখেছে,

أما طلحة والزبير ومن معهم , فلأنهم قد كانوا بايعوه , فنكثوا بيعته بغياً عليه , وخرجوا في جيوش من المسلمين , فوجب قتاله
অর্থ: ত্বলহা, যোবায়ের ও তাদের সাথীরা যেহেতু হযরত আলী রা. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন, অত:পর তার সাথে বিদ্রোহ করে তার বাইয়াত ভঙ্গ করেছে এবং মুসলমানদের একটি সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করেছে, সুতরাং তাদের সাথে হযরত আলী রা. এর যুদ্ধ করা ওয়াজিব হয়ে গেছে।

নিচের স্ক্রিনশট দেখুন,


হযরত মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে কাজী শাওকানীর জঘন্য বক্তব্য:

কাজী শাওকানী ওবালুল গমাম বইয়ে সিফফীনের যোদ্ধাদেরকেও রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যায়িত করেছে। অথচ সিফফীনের যুদ্ধে হযরত মুয়াবিয়া রা. এর সাথে আরও অনেক সাহাবীও ছিলেন। এছাড়া হযরত মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে যেসব শব্দ ব্যবহার করেছে, এতে আমাদের গা শিউরে উঠে। কাজী শাওকানী লিখেছে,

وأما أهل صفين , فبغيهم ظاهر , ولو لم يكن في ذلك إلا قوله صلى الله عليه وآله وسلم لعمار: ((تقتلك الفئة الباغية)) , لكان ذلك مفيداً للمطلوب , ثم ليس معاوية ممن يصلح لمعارضة علي , ولكنه أراد طلب الرياسة والدنيا بين فوم أغتام , لا يعرفون معروفاً ولا ينكرون منكراً , فخادعهم بأنه طالب بدم عثمان , فنفق ذلك عليهم , وبذلوا بين يديه دماءهم وأموالهم , ونصحوا له

অর্থ: সিফফীনের যোদ্ধাদের রাষ্ট্রদ্রোহীতা সুস্পষ্ট। বাস্তবে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী না হলেও হযরত আম্মারের সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী প্রমাণে যথেষ্ঠ ছিলো। রাসূল স. বলেছেন, তোমার সাথে একটি রাষ্ট্রদ্রোহী দল যুদ্ধ করবে। এছাড়া মুয়াবিয়া হযরত আলীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যও ছিলো না। বরং সে শামের মূর্খদের মাঝে নেতৃত্ব ও সম্পদের আকাংখী ছিলো। এই মূর্খরা সৎকাজকে সৎ ও নিকৃষ্ট কাজকে নিন্দনীয় মনে করতো না। মুয়াবিয়া এই শামের অধিবাসীদেরকে এই বলে ধোকা দিয়েছে যে, সে হযরত উসমান রা. এর রক্তের বদলা নিতে চায়। এভাবে তাদের সাথে সে মুনাফেকী করেছে। ফলে শামের অধিবাসীরা তার সামনে তাদের রক্ত ও সম্পদ বিসর্জন দিয়েছে, তার কল্যাণ কামনা করেছে।

কাজী শাওকানী শুধু হযরত মুযাবিয়া রা. এর সমালোচনা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, মুয়াবিয়া রা. এর সহযোগী অন্যান্য সাহাবাযে কেরাম সম্পর্কে তার বক্তব্য দেখুন,

وليس العجب من مثل عوام الشام , إنما العجب ممن له بصيرة ودين , كبعض الصحابة المائلين إليه , وبعض فضلاء التابعين , فليت شعري أي أمرٍ اشتبه عليهم في ذلك الأمر , حتى نصروا المبطلين وخذلوا المحقين , وقد سمعوا قول الله تعالى: ((فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ)) , وقد سمعوا الأحاديث المتواترة في تحريم عصيان الأئمة ما لم يروا كفراً بواحاً , وسمعوا قول النبي صلى الله عليه وآله وسلم لعمار: انها تقتله الفئة الباغية . ولولا عظيم قدر الصحبة ورفيع فضل خير القرون , لقلت : حب الشرف والمال قد فتن سلف هذه الأمة كما فتن خلفها
 

অর্থ: শামের সাধারণ মানুষের ব্যাপারে এতোটা বিস্মিত হওয়ার কোন কারণ নেই, কিন্তু সেসব লোকদের ব্যাপারে বিস্মিত হই, যাদের দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান ছিলো, যারা বিচক্ষণ ছিলেন, যেমন, মুয়াবিয়ার পক্ষ অবলম্বনকারী কিছু সাহাবী, বিশিষ্ট কিছু তাবেয়ী। হায়, আমি বুঝতে পারি না, কী কারণে তারা এজাতীয় সন্দেহের আবর্তে নিমজ্জিত হলেন; এমনকি তারা বাতিলের সাহায্য করলেন এবং সত্যকে লান্ছিত করলেন? অথচ তারা আল্লাহর এই বাণী শুনেছিলো: [অর্থ] যদি তাদের একদল অন্য দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে সেই দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো যে বাড়াবাড়ি করে, যতক্ণণ না তারা আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে।(হুজুরাত-৯)
তারা হযরত আম্মার বিন ইয়াসি রা. এর উদ্দেশ্যে রাসূল স. এর এ উক্তিও শুনেছিলো, [অর্থ:] তোমার সাথে রাষ্ট্রদ্রোহী একটি দল যুদ্ধ করবে। যদি সাহাবীদের উচ্চ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠ তিন যুগের উচ্চ ফজিলত না থাকতো, তাহলে আমি বলতাম: সম্পদ ও পদের লোভ এই উম্মতের পূর্ববর্তীদেরকে যেমন ফেতনায় ফেলেছে, তেমনি পরবর্তীদেরকেও। [শাওকানীর বক্তব্য শেষ হলো]

নিচের স্ক্রিনশট দেখুন,



বিজ্ঞ পাঠক: কাজী শাওকানী সাহাবীদের মর্যাদার প্রতি লক্ষ রেখে (?) যা বলেছে তাতে এই অবস্থা, যদি তিনি এই মর্যাদার প্রতি লক্ষ না করতেন, তাহলে না জানি কত কী বলতেন? আল্লাহ পাক সাহাবাদের সম্পর্কে এধরনের ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ থেকে আমাদেকে হেফাজত করুন।
হযরত মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে যেসব জঘন্য বক্তব্য কাজী শাওকানী লিখেছে,
১. পদ ও সম্পদের লোভ
২. হযরত উসমান রা. রক্তের বদলা নেয়ার কথা বলে ধোকাবাজি।
৩. বাতিল।

কাজী শাওকানীর ওবালুল গামাম এর লিংক:



আহলে হাদীস আলেম নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান:
কাজী শাওকানী আদ-দুরারুল বাহিয়্যা নামে একটি কিতাব লেখেন। কাজী শাওকানীর ছাত্র আহলে হাদীসদের বিশিষ্ট আলেম নওযাব সিদ্দিক হাসান খান এই কিতাবের একটি ব্যাখ্যা লেখেন। সিদ্দিক হাসান খানের এই ব্যাখ্যার নাম হলো, আর-রওজাতুন নাদিয়্যা। কিতাবটি আহলে হাদীসদের সিলেবাসভুক্ত একটি কিতাব। সালাফীদের শেইখ আলবানী দীর্ঘ দিন এই কিতাবের দরস দিয়েছে। শায়খ আলবানী আর-রওজাতুন নাদিয়্যার সংক্ষিপ্ত একটি ব্যাখ্যা লিখেছে।আলবানীর এই ব্যাখ্যার নাম হলো, আত-তা’লিকাতুর রজিয়্যা।



কিতাবটির প্রথম সংস্করণ ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে। দারু ইবনিল কাইয়্যিম ও দারু ইফফান নামক দু’টি লাইব্রেরী এটি প্রকাশ করেছে। কিতাবটি তাহকীক করেছে, আলবানী সাহেবের বিশিষ্ট ছাত্র আলী আল-হালাবী। আমাদের আলোচ্য বিষয় এ কিতাবের তৃতীয় খন্ডের ৫০১ পৃষ্ঠা থেকে পরবর্তী আলোচনায় রয়েছে। নিচের স্ক্রিনশট লক্ষ্য করুন। যারা আরও বিস্তারিত অনুসন্ধানে আগ্রহী, তারা মূল কিতাবটি নিচের লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিবেন।
কিতাবের লিংক:


আর-রওজাতুন নাদিয়্যাতে নওয়াব সিদ্দিক হাসান খানও কাজী শাওকানীর উক্ত বক্তব্য হুবহু উল্লেখ করেছে। নওয়াব সাহেব এসব বক্তব্যের কোন প্রতিবাদ করেননি। বরং এগুলো তিনি যত্নসহকারে তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। এই বক্তব্যগুলো মূলত: সিদ্দিক হাসান খানের উস্তাদ কাজী শাওকানীর। মূল কিতাব আদ-দুরারুল বাহিয়্যাতে এই বক্তব্যগুলো ছিলো না। নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান তার ব্যাখ্যায় এই বক্তব্যগুলো উল্লেখ করেছে। অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম ও হযরত মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে কাজী শাওকানী ও নওযাব সিদ্দিক হাসান খানের বক্তব্য একই। উস্তাদ ও শাগরেদ একই পথের পথিক। আসলে তারা কোন পথের পথিক ছিলো? শিয়াদের পথের পথিক ছিলো। কাজী শাওকানী নিজে যায়দী শিয়া ছিলো। তার অনুসারী আহলে হাদীস নওয়াব সিদ্দিক হাসানও এর বাইরে যেতে পারেনি।



উক্ত বক্তব্য উল্লেখের পর শায়খ মুহাম্মাদ আহমাদ শাকের সাহেব নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সম্পর্কে লিখেছে,

و قد غلب علي الشارح ما يغلب علي الأعجام من التشيع
“ব্যাখ্যাকার নওয়াব সিদ্দিক হাসানের মাঝে মূর্খ অনারবীদের মতো শিয়াদের প্রভাব জেকে বসেছে”

নিচের স্ক্রিনশট দেখুন,

এই বক্তব্যগুলো সম্পর্কে আলবানী সাহেবের কোন মন্তব্য আত-তা’লীকাতুর রজিয়্যাতে নেই। এর কারণ আমদের অজানা।

আল্লাহ পাক আমাদের সাহাবায়ে কেরামের সমালোচক ও সাহাবা-বিদ্বেষীদের থেকে হেফাজত করুন। সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে সাহাবা বিদ্বেষীদের থেকে হেফাজত করুন।
আমীন।
 


Tuesday, May 27, 2014

ইমাম মাহদির আগমনপূর্ব আলামতঃ ইরাক ও সিরিয়ার উপর অবরোধ

আবু নাদ’রা বর্ণনা করেন, আমরা হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেন,

“সেই সময়টি অতি নিকটে, যখন ইরাকিদের ‘দিরহাম’ ও ‘কাফিজ’ এর উপর অবরোধ আরোপ করা হবে”। জিজ্ঞেস করা হল, এই অবরোধ কার পক্ষ থেকে আরোপ করা হবে? উত্তরে তিনি বললেন, “অনারবদের পক্ষ থেকে”। এরপর বললেন, “সেই সময়টিও বেশি দূরে নয়, যখন সিরিয়ার অধিবাসীদের ‘মাদ’ ও ‘দিনার’ এর উপরও অবরোধ আরোপ করা হবে”। জিজ্ঞেস করা হল, এই অবরোধ কার পক্ষ থেকে হবে? বললেন, “পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে”। কিছু সময় নীরব থাকার পর বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার শেষ উম্মতের মধ্যে এমন এক খলীফার (ইমাম মাহদির) আবির্ভাব ঘটবে, যে মানুষকে মুঠি ভরে ভরে সম্পদ দান করবে এবং কোন হিসাব গণনা করবে না”।

(সহিহ মুসলিম, অধ্যায় ৪১, হাদিস নং ৬৯৬১) 

হাদিসের দিকে তাকালে দেখা যায়, এমনকি অবরোধ আরোপের সিরিয়াল পর্যন্ত দেওয়া আছে। ৬ ই আগস্ট ১৯৯০ থেকে শুরু হওয়া ইরাকি অবরোধ শুরু হয়। আর ২০১১ এর আগস্ট থেকে সিরিয়ার উপরও অবরোধ চলছে।

সিরিয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে শুধু “পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে” বলা হলেও ইরাকের ক্ষেত্রে “অনারবদের পক্ষ থেকে” বলা হয়েছে এবং কুয়েত দখলের পরপরই ৬ ই আগস্ট ১৯৯০ তারিখে হাদিসের শাব্দিক প্রয়োগকে বাস্তবে রুপ দিয়ে প্রথম অনারব সংগঠন (পশ্চিম, পূর্বসহ সকল জাতীয়তার সংগঠন) “আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিষদ” কর্তৃক ইরাকের উপর অর্থনৈতিক ও সব ধরনের বানিজ্যের উপর বানিজ্যিক অবরোধ আরোপ করা হয়। হাদিসে বলা হয়েছে, “ইরাকিদের ‘দিরহাম’ ও ‘কাফিজ’ এর উপর অবরোধ আরোপ করা হবে”।

দিরহাম = অর্থ
কাফিজ = তেল মাপার আঞ্চলিক একক

১ দিনার = ৭২ টি বার্লি দানার সম ওজন সম্পন্ন স্বর্ণ মুদ্রা। বর্তমান ৪.৪৫গ্রাম সোনা।
১ দিরহাম = ০.৭ দিনার (৭০% স্বর্ণ দিনার)

২০০৩ সালে যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকেই ইরাকি সেন্ট্রাল ব্যাংক ইরাকি দিনার নোট থেকে  ‘০০০’ তুলে দিয়ে সমমানের নতুন একক প্রচলনের চেষ্টা করছে। যার প্রথম চালান ২০১৪ তে আসার কথা।

উল্লেখ্য যে, ইতিহাসে ‘কাফিজ’ শব্দটি সব সময়ই তৈল মাপার একক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।  ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে দক্ষিন ইতালির উপর আরব প্রভাব থাকার কারণে তৈল মাপার এককের ক্ষেত্রে সিসিলিয়ান ভাষায় আরবি ভাষার “কাফিজ” শব্দের অনুরূপ  “কাফিসু” (Kafisu /kafiso)   শব্দ এসেছে।

এক টানা ১৩ বছর পর্যন্ত এই অবরোধের পর ২০০৩ সালের ২২ শে মে অধিকাংশ অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। অবরোধের যেই শর্তগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তৈল কোম্পানির অনুকূলে ছিল সেগুলো ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবত ছিল। আর অবরোধের যেই শর্তটি কুয়েত দখলের ক্ষতিপূরণ হিসাবে এখনও ইরাকের গ্যাস ও তৈল বিক্রির উপার্জন উপর থেকে ৫% কেটে নেয়, সেটি এখনও বলবত আছে।

কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং অধ্যাপক রিচার্ড গারফিল্ড তার সেপ্টেম্বর ৪, ২০০৩ এ প্রকাশিত  “The Iraqi babies scam is still alive” নিবন্ধে যুদ্ধ ব্যতীত শুধু এই অবরোধের ফলে অতিরিক্ত ৩,৪৫,০০০ থেকে ৫,৩০,০০০ নারী, শিশু ও বেসামরিক ইরাকির মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেন।