Friday, May 30, 2014

কেয়ামতের লক্ষণ, দাজ্জাল, ঈসা (আঃ), ইয়াজুজ-মাজুজ...

আলহামদুলিল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহি নাহনাদুহু ওয়ানাস্তা ইনুহু ওয়ানাস্তাগফিরুহু ওয়ানা'উজুবিল্লাহিমিন সুরুরি আনফুচিনা ওয়ামিন চাই'ইয়াতি আ'মালিনা, মাইঈয়াহদিহিল্লাহু ফালা মুদিল্লালাহ ওয়ামাই উদিলিলহু ফালা হাদিয়ালাহ। ওয়াশহাদুয়াল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরীকালাহু ওয়ানাশাহাদুয়ান্না মুহাম্মাদান আবদুহু রাসুলুহু।
আম্মা বাদ আউজুবিল্লা হিমিনাশশাইতনির রাজিম
.
বিসমিল্লাহির  রাহমানির  রাহিম .




সুবহা'নাল্লাহ ! এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সহীহ মুসলিমে একটা মাত্র হাদীস এতো বড়!
অনেক হাদীস গুলোকে এক সাথেই জানা যায় !!

বিভিন্ন ফিৎনা ও কিয়ামতের নিদর্শন::
সহিহ মুসলিম :: বই ৪১ :: হাদিস ৭০১৫ ।

নাওয়াস ইবন সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, একদা সকালে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন । আলোচনা কালে তিনি কখনো আওয়াজ ছোট করলেন,
আবার কখনো আওয়াজ বড় করলেন । ফলে আমরা মনে করলাম যে, দাজ্জাল বৃক্ষরাজির এ ঝাড়ের মধ্যেই বুঝি এসে পড়েছে । অতঃপর আমরা সন্ধ্যায় আবার তাঁর নিকট গেলাম ।
তিনি আমাদের মাঝে এর কিছু আলামত দেখতে পেয়ে বললেন, তোমাদের কি অবস্হা ? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা) ! আপনি সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন
এবং এতে আপনি কখনো আওয়াজ ছোট করেছেন, আবার কখনো বড় করেছন । ফলে আমরা মনে করেছি যে, দাজ্জাল বুঝি এ ঝাড়ের মধ্যেই বিদ্যমান । এ কথা শুনে তিনি বললেন,
দাজ্জাল নয়, বরং তোমাদের ব্যাপারে অন্য কিছুর আমি অধিক আশংকা করছি । শোন, আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকা অবস্হায় যদি দাজ্জালের আবির্ভাব হয় তবে আমি নিজেই তাকে প্রতিহত করব ।
তোমাদের প্রয়োজন হবে না। আর যদি আমি তোমাদের মাঝে না থাকা অবস্হায় দাজ্জালের আবির্ভাব হয়, তবে প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি নিজের পক্ষ হতে একে প্রতিহত করবে ।
প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহ তাআলাই হলেন আমার পক্ষ হতে তত্ত্বাবধায়ক । দাজ্জাল যুবক এবং কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট হবে । তার চক্ষু হবে স্ফীত আঙ্গূরের ন্যায় । আমি তাকে কাফির আবদুল উযযা ইবন কুতনের সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি ।
তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূড়া কাহফের প্রথমোক্ত আয়াত সমুহ পাঠ করে । সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত হবে । সে ডানে-বামে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে । হে আল্লাহর বান্দাগণ! অবিচল থাকবে ।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা) ! সে পৃথিবীতে কত দিন অবস্হান করবে ? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে ।
অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে । আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যেদিন এক বছরের সমান হবে, উহাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে ? জবাবে তিনি বললেন,
না, বরং তোমরা এদিন হিসাবে ঐ দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিবে । আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা) ! দাজ্জাল পৃথিবীতে কেমন করে চলবে ? তিনি বললেন, বাতাসে পরিচালিত মেঘের ন্যায় ।
সে এক সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদেরকে কুফরীর দিকে আহবান করবে । তারা তার উপর ঈমান আনহান করবে এবং তার ডাকে সাড়া দিবে । অতঃপর সে আকাশকে হুকুম করবে । আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে
এবং ভূমিকে নির্দেশ দিরে, ভূমি গাছ-পালা ও শষ্য উদগত করবে । এরপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদী পশুগুলো পূর্বের তূলনায় অধিক লম্বা, কুজ, প্রশস্ত স্তন এবং উদরপূর্ণ অবস্হায় তাদের নিকট ফিরে আসবে ।
অতঃপর দাজ্জাল অপর এক সম্প্রদায়ের নিকট আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি আহবান করবে । তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে । ফলে সে তাদের নিকট হতে ফিরে চলে যাবে । অমনি তাদের মাঝে
দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে উহাকে সম্মোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও ।
তখন যমীনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার চতূস্পার্শে একত্রিত হতে থাকবে, যেমন মধু মক্ষিকা তাদের সর্দারের চারিপাশে সমবেত হয় । তৎপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি
দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্হলের ন্যায় দু-ফাক করে ফেলবে । অতঃপর সে পূনরায় তাকে ডাকবে । যুবক দীপ্তমান হাস্যোজ্জল চেহারায় তার দিকে এগিয়ে আসবে । এ সময় আল্লাহ রাববুল আলামীন
মারইয়াম তনয় ঈসা (আঃ)-কে প্রেরণ করবেন । তিনি দুই ফিরিশতার কাধের উপর ভর করে গোলানা রং এর জোড়া পরিহিত অবস্হায় দামেশক নগরীর পূর্ব দিকের শুভ্র মিম্বারের উপর অবতরণ করবেন ।
যখন তিনি তার মাথা ঝুঁকাবেন তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম তাঁর শরীর থেকে গড়িযে পড়বে। তিনি যে কোন কাফিরের নিকট যাবেন সেই তাঁর শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে । তাঁর যতটৈ পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও
ততাদূর পর্যন্ত পৌছবে । তিনি দাজ্জালকে তালাশ করতে থাকবেন । অবশেষে তাকে লুদ- নামক স্থানে গিয়ে পাকড়াও করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন । অতঃপর ঈসা (আঃ) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন,
যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের ফিতনা থেকে হিফাযত করেছেন । তাদের নিকট গিয়ে তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহ সম্পর্কে সংবাদ দিবেন ।
এমতাবস্হায় আল্লাহ তাআলা ঈসা (আঃ)-এর প্রতি এ মর্মে অহী নাযিল করবেন যে, আমি আমার বান্দাদেরকে নাযিল করেছি, যাদের সাথে কারোই যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই ।
সুতরাং তুমি তাদেরকে নিয়ে ভূর পর্বতে চলে যাও । তখন আল্লাহ তাআলা ইয়াজুয-মাযুয সম্প্রদায়কে প্রেরণ করবেন । তারা প্রতি উচু ভূমি হতে ছুটে আসবে । তাদের প্রথম দলটি তবরিস্তান সমুদ্রের নিকট এসে এর সমুদয় পানি পান করে নিঃশেষ করে দিবে ।
অতঃপর তাদের সর্বশেষ দলটি এ স্হান দিয়ে যাত্রাকালে বলবে, এ সমুদ্রে এক সময় অবশ্যই পানি ছিল । তারা আল্লাহর নবী (সা) ঈসা (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে অবরোধ করে রাখবে ।
ফলে তাদের নিকট একটি বলদের মাথা বর্তমানে তোমাদের নিকট একশ দীনারের মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যবান প্রতিপন্ন হবে । তখন আল্লাহর নবী (সা) ঈসা (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন ।
ফলে আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুয-মাজুজ সম্প্রদায়ের প্রতি আযাব প্রেরণ করবেন । তাদের ঘাড়ে এক প্রকার পোকা হবে । এতে একজন মানুষের মৃত্যুর ন্যায় তালাও সবাই মরে খতম হয়ে যাবে । অতঃপর ঈসা (আ) ও
তাঁর সঙ্গীগণ পাহাড় হতে যমীনে বেরিয়ে আসবেন । কিন্তু তারা অর্ধ হাত জায়গাও এমন পাবেন না যথায় তাদের পঁচা লাশ ও লাশের দুর্গন্ধ নেই । অতঃপর ঈসা (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীগণ পূনরায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন ।
তখন আল্লাহ তাআলা উটের ঘাড়ের ন্যায় লহল এক ধরনের পাখি প্রেরণ করবেন । তারা তাদেরকে বহন করে আল্লাহর ইচ্ছা মাফিক স্থানে নিয়ে ফেলবে । এরপর আল্লাহ এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্যণ করবেন যার ফলে কাচা-পাকা কোন ঘরই আর বাকী থাকবে না ।
এতে যমীন বিধৌত হয়ে উদ্ভিদ শূন্য মৃত্তিকায় পরিণত হবে । অতঃপর পূনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে যমীন! তুমি আবার মৃত্তিকায় পরিণত হবে। অতঃপর পুনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে যমীন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন কর
এবং তোমার বরকত ফিরিয়ে দাও। সেদিন একদল মানুষ একটি ডালিম ভক্ষণ করবে এবং এর বাকলের নীচে লোকেরা ছায়া গ্রহণ করবে । দুধের মধ্যে বরকত হবে । ফলে দুগ্নবতী একটি উটই একদল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে, দুগ্ধবতী একটি গাভী
একগোত্রীয় মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে এবং যথেষ্ট হবে দুগ্ধবতী একটি বকরী এক দাদার সন্তানের জন্য । এ সময় আল্লাহ তায়াআলা অত্যন্ত আরামদায়ক একটি বাতাস প্রেরণ করবেন । এ বাতাস সমস্ত ঈমানদার লোকদের বগলে গিয়ে লাগবে
এবং সমস্ত মুমিন মুসলিমদের রুহ কবয করে নিয়ে যাবে । তখন একমাত্র মন্দ লোকেরাই এ পৃথিবীতে বাকী থাকবে । তারা গাধার ন্যায় পরস্পর একে অন্যের সাথে ব্যাক্তিচারে লিপ্ত হবে । এদের উপরই কিয়ামত কায়িম হবে ।

No comments:

Post a Comment