Saturday, May 31, 2014

ত্বাওয়াগীত তথা ত্বাগূত হলো, আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে যার ইবাদত করা হয় (১)

ত্বাওয়াগীত তথা ত্বাগূত হলো, আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে যার ইবাদত করা হয় (১ম পর্ব)। শাইখ আব্দুল মুনয়িম মুছত্বফা হালীমাহ

বিসমিল্লাহির  রাহমানির রাহীম ।

ত্বাগূত–যাদেরকে বর্তমানে আল্লাহর পরিবর্তে ইবাদত করা হচ্ছে,তাদের পরিচয় লাভ করা শ্রেয় হবে- যেন আমরা তাদের পরিহার করতে পারি এবং এদের উপর শারীয়াতের ওয়াজিব বিধান প্রয়োগ করতে পারি। আমরা সর্ব প্রথম ত্বাগূতদের মূল ও প্রধান নেতা দ্বারা আলোচনা শুরু করছি।



  • ১ – اَلشَّيْطَانُ – শয়তানঃ


সে হলো অভিশপ্ত। যে নিজের উপর প্রতিজ্ঞা করেছিল- বান্দাদেরকে আল্লাহর তায়ালার ইবাদত হতে দূরে রেখে অন্যের ইবাদতের দিকে আকৃষ্ট করবে।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ ﴿١٦﴾ ثُمَّ لآتِيَنَّهُم مِّن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ وَلاَ تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ ﴿١٧
(ইবলীস) বলল- আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন এ কারণে আমিও শপথ করে বলছি- আমি তাদের জন্যে সরল পথে অবশ্যই ওঁৎ পেতে বসে থাকব।  * অতঃপর আমি (পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে) তাদের সম্মুখ দিয়ে, পিছন দিয়ে, ডান দিক দিয়ে এবং বাম দিক দিয়ে তাদের কাছে আসব, আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞরূপে পাবেন না।
(সূরা আ’রাফ, ১৬-১৭ নং আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
رَبِّ بِمَآ أَغْوَيْتَنِي لأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الأَرْضِ وَلأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ﴿٣٩﴾ إِلاَّ عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ﴿٤٠
সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে দেব। আপনার মনোনীত বান্দাদের ব্যতীত।      (সূরা হিজর, ৩৯-৪০ নং আয়াত)
অতএব, ঐ লোকদের উপর তার কোন ক্ষমতা নেই।
আর উক্ত গুণ দ্বারা অনেক মানব শয়তান গুণান্বিত হয়েছে, যারা নিজেদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছে এবং শিরক, কুফরও বিভ্রান্তিকে সাহায্য করার দায়ভার বহন করার জন্য সুদৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে গেছে।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
وَلاَ يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّىَ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُواْ
বস্ততঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যতক্ষর্ণ পর্যন্ত তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন হতে ফিরাতে না পারে যদি তা সম্ভব হয়।
(সূরা বাকারহ, ২১৭ নং আয়াত)

যদি প্রশ্ন করা হয়,  নিশ্চয় ত্বাগূত হলো আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করা হয়; অতএব, শয়তানের  উদ্দেশ্যে মানুষের ইবাদত কিরূপে হতে পারে?
এর উত্তরে আমরা বলবঃ কুফরী ও শিরক করার ক্ষেত্রে তার আনুগত্য ও অনুসরণ করার দিক দিয়ে ইবাদত বা দাসত্ব করা হয়।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آدَمَ أَن لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
হে বানী আদম, আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়নি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।    
(সূরা ইয়াসীন, ৬০ নং আয়াত)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
إِن يَدْعُونَ مِن دُونِهِ إِلاَّ إِنَاثًا وَإِن يَدْعُونَ إِلاَّ شَيْطَانًا مَّرِيدًا
তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শুধু নারীর আরাধনা করে এবং শুধু অবাধ্য শয়তানের পূজা করে। (সূরা নিসা, ১১৭ নং আয়াত)
এবং ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলঃ  يَا أَبَتِ لَا تَعْبُدِ الشَّيْطَانَ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمَنِ عَصِيًّا
হে আমার পিতা, শয়তানের ইবাদত করো না। নিশ্চয় শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য।
(সূরা মারইয়াম, ৪৪ নং আয়াত)


  • ২ – أَلْهَوٰى – প্রবৃত্তিঃ


أَلْهَوٰى– ‘প্রবৃত্তি’ কখনো اَلْمَيْلُ ‘ঝোঁক’ اَلْحُبَّ ‘ভালবাসা’ اَلْعِشْقُ ‘অনুরাগ’ বা ‘প্রেম’ -এর অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং ‘কল্যাণ ও অকল্যাণ’ -এর প্রবেশদ্বারেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং কোন জিনিসের ইচ্ছা করা ও কামনা করার অর্থে ব্যবহৃত হয়। এবং هَوَى النَّفْسِ অর্থাৎ اِرَادَتُهَا এর ‘ইচ্ছা করা’।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ       وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى
এবং যে ব্যক্তি খেয়াল-খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে।
(সূরা নাযিআত, ৪০ নং আয়াত)

এর অর্থ হলোঃ সে নিজেকে স্বীয় প্রবৃত্তি থেকে বিরত রেখেছে এবং এটা আল্লাহর অবাধ্যতায় যে সকল কাজের দিকে তাকে তা হতে নিবৃত্ত রেখেছে।
আর যখন সাধারণভাবে أَلْهَوٰى ‘প্রবৃত্তি’ শব্দ উচ্চারণ করা হবে, তখন গুণবাচক কোন শব্দ উল্লেখ না করা পর্যন্ত -এর দ্বারা নিন্দনীয় বিষয়ই উদ্দেশ্য হবে। যেমন তাদের কথাঃ هَوَى حَسَنٌ – ‘উত্তম প্রবৃত্তি; এবং هَوىً مُوَافِقٌ للِّصَّوَابِ (উক্ত) প্রবৃত্তি সত্যের অনুকুলে। (লিসানুল আরব। আমি (লেখক) বলছি কুরআনে কারীমে নিন্দনীয় শব্দের দ্বারাই শুধুমাত্র أَلْهَوٰى ‘হাওয়া’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে)
‘প্রবৃত্তি’ কোন কোন অবস্থায় ‘ত্বাগূত’ ও ‘মা‘বূদে’ পরিণত হয়ে যায়। তা হলো যদি আল্লাহর অবাধ্যতায় এর অনুসরণ ও আনুগত্য করা হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে এটাকে বিধান দানের মূল নির্ধারণ করা হয়Ñ এ ভাবে যে তার প্রবৃত্তি যে টাকে সত্য বলে মনে করবে প্রকৃত পক্ষে ওটাই সত্য। আর প্রবৃত্তি যেটাকে বাতিল বা মিথ্যা মনে করবে তবে ওটা বাতিল বা মিথ্যা, যদিও ওটা আল্লাহ তায়ালার শারীয়াতের পরিপন্থী হয়।
তদ্রুপভাবে ‘প্রবৃত্তি’ কে কেন্দ্র করেই বন্ধুত্ব স্থাপন করা এবং শত্রুতা করা। এভাবে যে স্বীয় প্রবৃত্তি যেটা কামনা করে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে যেটাকে কেন্দ্র করে বন্ধুত্ব স্থাপন করা ওয়াজিব তার ভিত্তিতে নয়। স্বীয় প্রবৃত্তি যার সঙ্গে দুশমনী রাখে তার সাথে শত্রুতা করে; যদিও তার সাথে শরীয়াতের দিক দিয়ে বন্ধুত্ব স্থাপন করা ওয়াজিব।
সুতরাং এমতাবস্থায় ‘প্রবৃত্তি’ আল্লাহর পরিবর্তে ভিন্ন মা’বূদ। সে প্রকৃত পক্ষে স্বীয় খেয়াল-খুশীকে প্রভু হিসাবে গ্রহণ করল এবং এটাকে আল্লাহ তায়ালার সমকক্ষ নির্ধারণ করে নিল।

যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا
যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।
(সূরা কাহ্ফ, ২৮ নং আয়াত)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ    أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا
আপনি তাকে কি দেখেন না, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন?
(সূরা ফুরকান, ৪৩ নং আয়াত)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ    أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ
আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন।
(সূরা জাসিয়া, ২৩ নং আয়াত)

ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার প্রবৃত্তির পূজা করে, তবে সে তো খেয়াল-খুশীকে ইলাহ (উপাস্য) হিসাবে গ্রহণ করল। তার প্রবৃত্তিই তার ইলাহ। যিনি ইলাহ হওয়ার উপযুক্ত তাকে ইলাহরূপে গ্রহণ করে না; বরং স্বীয় প্রবৃত্তিকে উপাস্য হিসাবে গ্রহণ করে। আর উক্ত প্রবৃত্তিকে উলাহরূপে গ্রহণকারী ব্যক্তির-এর প্রতি মুহাব্বাত রয়েছে; যেমন মুশরিকদের স্বীয় উপাস্যদের প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে এবং গোবৎস পূজারীদের গোবৎসের প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। আর এটা আল্লাহর সঙ্গে ভালবাসা এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে মুহাব্বাত করা নয়। এটা মুশরিকদের অনুরূপ ভালবাসা।
আর অন্তর কখনো কখনো আল্লাহকে ভালবাসার দাবী করে। অথচ প্রকৃতপক্ষে এটা শিরকী মুহাব্বাত হয়ে থাকে। তার প্রবৃত্তি যা কামনা করে সে তাকে ভালবাসে এবং কখনো কখনো অন্তর আল্লাহর ভালবাসার সঙ্গে প্রবৃত্তিকে শরীক করে থাকে।
(আল-ফাতাওয়া, ৮/৩৫৯)


  • ৩ – اَلسَّاحِرُ যাদুগরঃ


সে হচ্ছে ত্বাগূত। কেননা সে বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা আছে বলে দাবী করে। অতএব, সে যার প্রতি ইচ্ছা অকল্যাণ পৌঁছায় এবং যাকে ইচ্ছা তার থেকে বিপদ দূর করতে পারে। আর এটা হল আল্লাহ তায়ালার বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে হতে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যেমন ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
তবুও অনেক লোক তাওহীদ এবং তাদের উপর আল্লাহর হক বিষয়ে অজ্ঞ থাকার দরূণ বিভিন্ন বিষয়ে উপকার ও ক্ষতি করার দিক দিয়ে প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা আছে বলে তাদের প্রতি স্বীকৃতি প্রদানের দিক দিয়ে তারা যাদুকরদের ইবাদত বা পূজা করে থাকে। এবং ভীতি, আশঙ্কা ও আশা করার দিক দিয়ে এভাবে যে, তারা তাদের কাছে আশা করে যে, তারা তাদের উমুক উমুক উপকার করতে পারবে কিংবা কোন রোগ-শোক এবং অন্যান্য বিপদ দূর করতে পারবে।
এ জন্য নিশ্চয় যাদুকর হচ্ছে ত্বাগূত, কাফির। ইসলামে তার শাস্তি হচ্ছে তরবারির আঘাতে তার মস্তককে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হবে।
তার কাফির হওয়ার দলীল হচ্ছেঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ

وَاتَّبَعُواْ مَا تَتْلُواْ الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَـكِنَّ الشَّيْاطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ
অর্থঃ এবং সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করতো, তারা ওরই অনুসরণ করছে এবং সুলাইমান কুফরী করেনি, কিন্তু শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদুবিদ্যা এবং যা বাবেলে হারুত-মারুত ফেরেশেতাদ্বয়ের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিক্ষা দিতো, এবং তারা উভয়ে কাউকেও এটা শিক্ষা দিতো না- এমনকি তারা বলতো যে, আমরা পরীক্ষাধীন ছাড়া কিছুই নই, কাজেই তুমি কাফির হয়ো না।
(সূরা বাক্বারাহ, ১০২ নং আয়াত)

কুরতুবী (রঃ) তাফসীরে বলেছেনঃ তাঁর বানীঃ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ ‘সুলাইমান কুফরী করেনি’-এর দ্বারা আল্লাহর পক্ষ হতে সুলাইমান (আঃ)-এ জন্য নির্দোষ প্রমাণ করা হচ্ছে; আর আয়াতে এমন কিছু উল্লেখ নেই যে, কেউ তাঁকে সুলাইমান (আঃ) কুফরীর দিকে সম্পৃক্ত করেছে।
কিন্তু ইয়াহুদীগণ তাকে যাদুর দিকে সম্পৃক্ত করেছে। আর যেহেতু যাদু করা কুফরী সুতরাং এটা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেল যে, কেউ তাকে কুফরীর দিকে সম্পৃক্ত করেছে।
অতঃপর তিনি বলেছেনঃ  وَلَـكِنَّ الشَّيْاطِينَ كَفَرُواْ  “কিন্তু শয়তানেরা কুফরী করেছে”।
অতএব, তিনি যাদু শিক্ষা দেয়ার জন্য তাদের কুফরী প্রমাণ করেছেন।

তিনি আরো বলেছেনঃ মালেক (রঃ)-এর অভিতম হলোঃ যখন কোন মুসলিম স্বয়ং কুফরী কালাম  দ্বারা যাদু করবে, তাকে হত্যা করা হবে, তাকে তাওবাহ করতে বলা হবেনা এবং তার তাওবাহ গ্রহণ করা হবে না। কেননা সে নাস্তিকদের মতো গোপনে একটি কাজ করছে। কেননা আল্লাহ তায়ালা যাদুকে কুফরী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ
“এবং তারা উভয়ে কাউকেও এটা শিক্ষা দিতো না- এমনকি তারা বলতো যে, আমরা পরীক্ষাধীন ছাড়া কিছুই নই, কাজেই তুমি কাফির হয়ো না” আর এটাই আহমাদ ইবনে হাম্বল, আবূ ছাওর, ইছহাক, শাফিয়ী এবং আবূ হানীফার অভিমত এবং উমার, উছমান, ইবনে উমার, হাফসাহ, আবূ মূসা, কাঈল ইবনে সা‘দ এবং সাতজন তাবিয়ী হতে যাদুকরকে হত্যা করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে

শাফিয়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছেঃ যাদুগরকে হত্যা করা হবে না। কিন্তু যদি যাদুর দ্বারা কাউকে হত্যা করে এবং বলে আমি হত্যা করতে চেয়েছি। আর যদি বলে আমি তাকে হত্যা করতে চাইনি, তবে তাকে হত্যা করা হবে না, এতে ভুলক্রমে হত্যার ন্যায় রক্তপণ ওয়াজিব হবে। যদিও তাকে শিষ্টাচারের জন্য অন্যায়ের সমপরিমাণ প্রহার করা হবে।

ইবনুল আরাবী বলেছেনঃ এটা দুই দিক দিয়ে বাতিলঃ
প্রথমঃ তিনি সুলাইমান (আঃ) যাদু শিক্ষা দেননি। যাদুর প্রকৃতরূপ হলো, এটা রচিত এমন কথা, যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্যকে সম্মান করা হয় এবং ওর দিকে ভাগ্য ও সৃষ্টিজগৎকে সম্পৃক্ত করা হয়।


দ্বিতীয়ঃ নিশ্চয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা স্বীয় কিতাবে স্পষ্টভাবে এটাকে কুফরী বলেছেন। তিনি বলেছেনঃ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ “সুলাইমান (আঃ) কুফরী করেনি”-অর্থাৎ যাদুর কথার মাধ্যমে। وَلَـكِنَّ الشَّيْاطِينَ كَفَرُواْ “কিন্তু শয়তানেরা কুফরী করেছে,” অর্থাৎ যাদুর মাধ্যমে এবং এটাকে শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে। আর হারুত ও মারুত ফেরেশেতাদ্বয় বলতেনঃ  إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ “আমরা পরীক্ষাধীন ছাড়া কিছুই নই, কাজেই তুমি কাফির হয়ো না”-আর এটা বক্তব্যের গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
(আল-জামি লি আহকামিল কুরআন, ২/৩৪, ৪৭-৪৮)
শাইখ, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রঃ) ঈমান ধ্বংসকারী বিষয়সমূহ যা উক্ত ব্যক্তিকে মিল্লাত থেকে বের করে দেয়-এর মধ্যে একটি ‘যাদু’ এবং এর দ্বারা আমল করাকে উল্লেখ করেছেন।
(আর-রাসায়িলুশ-শাখছিয়াহ, ৬৯ পৃঃ)

এবং যাযিরাতুল আরব (আরব উপদ্বীপে) তাওহীদবাদী আলেমদের মধ্যে তাঁর সন্তান-সন্ততি ও পৌত্রগণ উক্ত বিষয়ে তার অনুসরণ করেছেন।
শাইখ ‘আল-ইকনা’ গ্রন্থের রচয়িতা হতে উল্লেখ করেছেনঃ যাদু শিক্ষা করা, শিক্ষা দেয়া এবং এর চর্চা করা হারাম। এটা শিক্ষা গ্রহণ করলে এবং চর্চা করলে তাকে কাফির আখ্যায়িত করা হবে। সে এটাকে হারাম বিশ্বাস করুক, কিংবা বৈধ বিশ্বাস করুক এতে কোন পার্থক্য হবে না। অতএব, আপনি উক্ত বক্তব্য নিয়ে চিন্তা করুন!

(আর-রাসায়িলুশ-শাখছিয়াহ, ২১৩ পৃঃ)

No comments:

Post a Comment